Published : 05 Feb 2025, 08:32 PM
ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর করে গাজা দখলের যে প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, তাতে বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অনেক দেশ ও গোষ্ঠী।
হামাস :
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, "গাজার জনগণ এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের অবসান নিশ্চিত করা, জনগণকে তাদের ভূমি থেকে সরানো নয়।"
সৌদি আরব:
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার যে কোনও প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই অবস্থানকে "স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন" বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্য:
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, "গাজার বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। দীর্ঘ সংঘাতের ফলে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
“আমরা সবসময় স্পষ্ট করে বলে এসেছি, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ফিলিস্তিনিদেরকে অবশ্যই গাজা ও পশ্চিম তীরে নিরাপদে বাস করা ও উন্নয়নের সুযোগ পেতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় তাদের পাশে আমাদের থাকা উচিত।”
ফ্রান্স:
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন বলেছেন, "ফ্রান্স আবারও গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করার বিরোধিতা করছে। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এটি ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার ওপর আঘাত এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি বড় বাধা। একইসঙ্গে, আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার মিশর এবং জর্ডানের পাশাপাশি পুরো অঞ্চলের জন্য অস্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে এই পরিকল্পনা।”
স্পেন:
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, “আমি এই বিষয়ে খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই: গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি এবং তাদের অবশ্যই গাজা থাকার অধিকার আছে।”
তিনি আরও বলেন, “গাজা ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ, যা স্পেন সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও উন্নতির নিশ্চয়তা দিয়ে গাজা পাশাপাশি অবস্থানে থাকতে হবে।”
আয়ারল্যান্ড:
আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, “এখানে একটি দিক খুব পরিষ্কার, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি জনগণের নিজ নিজ রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাসের অধিকার রয়েছে, এবং আমাদের লক্ষ্য সেটিই হওয়া উচিত। গাজার জনগণকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার যে কোনও পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরোধী।”
মিশর:
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাতি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফার সঙ্গে বৈঠকে গাজা পুনর্গঠন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। ফিলিস্তিনিদের গাজায় রেখেই এই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দেন তারা।
ফিলিস্তিন:
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি, অধিকার এবং পবিত্র স্থানসমূহ ছেড়ে যাবে না। গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম—সবই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইরান:
তেহরানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, "ইরান কোনোভাবেই ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির পক্ষে নয় এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।"
রাশিয়া:
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, রাশিয়া মনে করে, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মীমাংসা কেবল দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তিতেই সম্ভব।
এটি সেই তত্ত্ব যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনায় অন্তর্নিহিত রয়েছে, এটি এমন তত্ত্ব যা এই সমস্যায় জড়িত বেশিরভাগ দেশ ভাগ করে নিয়েছে। আমরা এটি থেকে এগিয়ে যাই, আমরা এটি সমর্থন করি এবং বিশ্বাস করি যে এটিই একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প।
চীন:
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আশা করে, সব পক্ষই যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত পরবর্তী শাসনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে যাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক সমাধানের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়।
তুরস্ক:
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “গাজা দখলের পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য 'অগ্রহণযোগ্য'। ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে করা যে কোনও পরিকল্পনাই আরও বেশি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।”
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল-শেইখ বলেছেন, "ফিলিস্তিন নেতৃত্ব পুনরায় নিশ্চিত করছে, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তির একমাত্র নিশ্চয়তা।"
অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার সরকার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে; যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা উভয়ই শান্তিতে থাকতে পারবে।”
ফিলিস্তিনি-মার্কিন প্রতিনিধি:
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক ও ফিলিস্তিনি-মার্কিন প্রতিনিধি রাশিদা তালিব বলেন, “ফিলিস্তিনিরা কোথাও যাবে না। গণহত্যা ও জাতিগত নিধনে অর্থায়নের জন্য কংগ্রেসে দ্বিদলীয় সমর্থনের কারণেই এই প্রেসিডেন্ট কেবল এই ধর্মান্ধ উগ্র মন্তব্য করতে ছড়াতে পারছেন। এখনই সময় আমার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সমর্থনকারী সহকর্মীদের সরব হওয়ার।”