Published : 26 May 2025, 04:06 PM
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এবারের আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে বিশ্ব বাণিজ্যে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা কাটানোর উপায় যেমন খুঁজবেন তেমনি গৃহযুদ্ধ থামাতে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে আলোচনায় বসাতে আরেকটি চেষ্টাও করে দেখবেন।
সপ্তাহান্তে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের পর সোম মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে জোটের এবারের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত চলা এই সম্মেলনে নেতারা মিয়ানমার আর বাণিজ্য কৌশল- মূলত এই দুটো বিষয় নিয়েই কথাবার্তা বলবেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সান সু চির বেসরকারি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী শাসনকর্তার আসনে বসার পর থেকে দেশটিতে তুমুল অস্থিরতা বিরাজ করছে।
প্রথমে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলন, সেখানে সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নের পর বিরোধীদের অনেকগুলো গোষ্ঠী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। আগে থেকে সশস্ত্র লড়াইয়ে থাকা একাধিক জাতিগত গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সমঝোতা হওয়ার পর মিয়ানমারের জান্তাকে অনেকগুলো ফ্রন্টে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
চলতি বছরের আসিয়ান সভাপতির দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়া বলেছে, বিবদমান সব পক্ষকে সরাসরি আলোচনায় বসানোর চেষ্টায় তারা জান্তা এবং মিয়ানমারের সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা চালিয়ে যাবে।
“এই আলোচনা অনেকবার করে যেতে হবে যেন সব পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করা যায়,” শনিবার মিয়ানমারে সংঘাত নিয়ে দুটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ হাসান। আগামী মাসে তার মিয়ানমার সফরে যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
দক্ষিণপূর্ণ এশিয়ার ১০ দেশের জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিয়ানমারে আসিয়ানের স্থায়ী দূত নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
“আমরা এটি নিয়ে ভাবছে। বিষয়টি হলো- কে হবেন সেই বিশেষ দূত, যার হয়তো তিন বছরের মতো মেয়াদ থাকবে,” বলেন মোহামেদ।
২০২১ সালে মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটির জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংকে আসিয়ান সম্মেলন থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বলেছেন, এবারের শীর্ষ সম্মেলনে তার দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে তার দেশ।
গত মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন, একদিন পর তিনি মিয়ানমারের ছায়া ন্যাশনাল ইউনিটি সরকারের (এনইউজি) সঙ্গেও অনলাইনে কথা বলেন। এই দুই বৈঠকের পর মিয়ানমারে শান্তি আলোচনা নিয়ে আশাবাদ পুনর্জাগরিত হয়।
মিয়ানমারের জান্তা চাইছে, এ বছরের শেষদিকে দেশটিতে একটি নির্বাচন আয়োজনের। কিন্তু সমালোচকরা বলছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে ওই নির্বাচন হলে শেষ পর্যন্ত তাতে সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বই বহাল থাকবে, প্রক্সিদের দিয়ে তারাই ক্ষমতা চালাবে।
২০২১ সালে অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর আসিয়ান মিয়ানমার নিয়ে ‘৫ দফা ঐকমত্যের’ শান্তি পরিকল্পনা হাজির করলেও তা কার্যকর করা যায়নি। জান্তার নির্বাচনি পরিকল্পনা নিয়ে জোটের অবস্থান কী হবে তা নিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।
আসিয়ান নেতাদের মঙ্গলবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির কারণে বিশ্ববাজারে দেখা দেওয়া চরম অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের বৈঠক হতে যাচ্ছে।
মার্কিন প্রশাসনের নতুন এ সিদ্ধান্তের কারণে ছয়টি দক্ষিণপূর্ব দেশকে জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাতে ৩২ থেকে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক গুণতে হবে। অবশ্য এ নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের আলোচনাও চলছে। আলোচনা সফল হলে শুল্কের পরিমাণ কমতেও পারে।
সোমবার থেকে হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনের আগে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বলেছেন, আসিয়ান নেতারা শুল্ক নিয়ে আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া তুলনা করে দেখবেন।
“বাণিজ্য বিষয়ে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে, আমাদের বিভিন্ন সদস্য দেশের ভিন্ন, ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যেই এ ব্যাপারে একমত হওয়ার পথ খুঁজতে হবে,” বলেছেন তিনি।
আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগর নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা। বাণিজ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথের মালিকানা নিয়ে চীনের সঙ্গে ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার বিরোধ দিন দিন বাড়তে দেখা যাচ্ছে।