Published : 27 May 2025, 12:55 AM
ঋতুস্রাবের কারণে ছুটি চেয়েছিলেন এক শিক্ষার্থী। কিন্তু সেই ছুটি পাওয়ার জন্য অসুস্থতার প্রমাণ দিতে তাকে ট্রাউজার খুলতে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ঘটেছে এমন অদ্ভুত ঘটনা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চীনে ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণী বয়স্ক একজন নারীকে প্রশ্ন করছেন, "পিরিয়ডকালীন ছুটি পেতে কি প্রতিটি মেয়েকে ট্রাউজার খুলে আপনাকে দেখাতে হবে?" জবাবে ওই নারী বলেন, "মূলত হ্যাঁ। এটিই আমাদের কলেজের নিয়ম।"
চীনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে গেনডান ইনস্টিটিউট নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের চিকিৎসাকেন্দ্রে।
প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, কর্মীরা ‘নিয়ম মেনেই’ কাজ করেছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই একে নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন আখ্যা দিয়েছেন।
ঘটনার বিষয়ে ছাত্রী ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে বিবিসি জানিয়েছে।
এদিকে, ভিডিওটি এবং কলেজের বিবৃতি পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে এর স্ক্রিনশট এবং ভিডিও ক্লিপ এখনো ছড়িয়ে পড়ছে, এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ডউইনে (চীনের টিকটক) একজন নিজেকে ওই ছাত্রী বলে দাবি করে লেখেন, ভিডিওটি পোস্ট করার পর ‘অশ্লীল কনটেন্ট’-এর অভিযোগে তার অ্যাকাউন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে, ১৬ মে প্রকাশিত কলেজের বিবৃতিতে বলা হয়, অনলাইনে ছড়ানো ভিডিও ‘বিকৃতভাবে উপস্থাপন’ করা হয়েছে এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ছাত্রীর সম্মতি নিয়েই কাজ করা হয়েছিল এবং কোনও শারীরিক পরীক্ষা বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
যদিও ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রীটি যখন লিখিত নিয়ম দেখতে চান, তখন কর্মী কোনও উত্তর দেননি, বরং তাকে হাসপাতালে যেতে বলেন।
এ ঘটনার পর চীনের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য ব্যবহারকারী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, “মাথাব্যথা হলে কি মাথা কেটে দেখাতে হবে?”
আরেকজন লিখেছেন, “চলুন, স্যানিটারি প্যাড খুলে ছুটির চিঠিতে সেঁটে দিই!”
স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে গেনডান ইনস্টিটিউটের এক কর্মী বলেন, কিছু শিক্ষার্থী যেন ভুয়া অজুহাতে পিরিয়ডের ছুটি না নেয়, সেজন্যই এই নিয়ম করা হয়েছিল।
তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি বারবার একই ছুটি চাওয়া হয়, তাহলে তো শুধু রেকর্ড রাখা গেলেই হয়—এই অবমাননাকর প্রক্রিয়ার দরকার কী?”
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম চায়না ন্যাশনাল রেডিও এক মতামত প্রতিবেদনে লিখেছে, “ঋতুস্রাব একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ ধরনের নিয়ম শুধু অস্বস্তি তৈরি করবে এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলবে।”
এই ঘটনায় গেনডান ইনস্টিটিউটও যুক্ত হলো সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়, যারা ‘অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ’ আরোপ করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
গত বছর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে বেড কার্টেইন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল, যেটি গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। কর্তৃপক্ষ বলেছিল, এগুলো ‘অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’।
এছাড়া মে দিবসের ছুটিতে একা ঘুরতে যাওয়া, রোড ট্রিপ বা সাইকেল ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব নির্দেশনা ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।
শাওহংশু অ্যাপে নিজেকে গেনডান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী দাবি করে একজন লিখেছেন, “এই ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ যে সমালোচনার মধ্যে পড়েছে, সেটি তাদের প্রাপ্য। আগেও মেয়ে শিক্ষার্থীরা এসব নিয়ে মুখ খুলেছিল, কিন্তু প্রশাসন পাত্তা দেয়নি।”
“এবার অন্তত আলোচনা শুরু হয়েছে। চুপ থাকেনি—এটাই বড় ব্যাপার।”