Published : 25 May 2025, 06:15 PM
ইসরায়েলে সরকারবিরোধী এক সমাবেশে সাবেক এক জিম্মি বলেছেন, গাজায় বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি ইসরায়েলের বিমান হামলাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেতেন। এখন যারা জিম্মি আছে তাদেরও সম্ভবত একই দশা।
শনিবার রাতে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও সমাবেশগুলোতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন; সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে তেল আবিবের হাবিমা স্কয়ারে।
তার কাছেই তেল আবিব মিউজিয়ামের বাইরে হোস্টেজ স্কয়ারে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সেখানেই দেড় হাজারের মতো বিক্ষোভকারীর কাছে নামা লেভি তার জিম্মিদশার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
তিনি বলেন, জিম্মিদশায় তিনি ইসরায়েলি হামলাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেতেন। এখন যারা জিম্মি আছে তারা বেঁচে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেন নামা।
“এগুলো (হামলা) হতো আচমকা। প্রথমে আপনি একটা হুইসেল শুনবেন, প্রার্থনা করতে থাকবেন যেন আপনার ওপর না পড়ে, এবং তারপর- বুম, এত জোরে শব্দ হয় যে তা আপনাকে অবশ করে দেবে। পৃথিবী কেঁপে ওঠে।
“প্রতিবারই নিজেকে বোঝাতাম যে মনে হয় আমি শেষ। একবার এমন বিপদে পড়েছিলামও, এক বোমাবর্ষণে আমি যে বাড়িতে ছিলাম তার অংশবিশেষ ধসে পড়েছিল। আমি যে দেয়ালে হেলান দিয়ে ছিলাম, সেটি ধসে পড়েনি, তাতেই বেঁচে গেছি,” বলেন জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি-জিম্মি চুক্তির অধীনে ছাড়া পাওয়া ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ৫ নারী গোয়েন্দা সেনার একজন নামা।
এখন যারা গাজায় জিম্মি অবস্থায় দিন পার করছে তারাও একই রকমই আতঙ্কে আছে বলে ধারণা তার।
“ওটা ছিল আমার বাস্তবতা, এখন সেটাই তাদের বাস্তবতা। এই মুহূর্তে, যারা জিম্মি অবস্থায় আছে তারা একই হুইসেল আর বুম শুনছে, ভয়ে কেঁপে উঠছে। কোথাও পালানোর জায়গা নেই তার, তারা কেবল প্রার্থনা করতে পারে এবং ভয়ঙ্কর এক অসহায়ত্ব অনুভব করার মধ্যে দেওয়ালে আঁকড়ে ধরতে পারে,” বলেন তিনি।
নামা জানান, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ তিনি একাই ছিলেন।
“কেবল আমি এবং আমাকে অপহরণকারীরা, সবসময় দৌড়ের ওপর থাকতাম। এমনও কত দিন গেছে, কোনো খাবার নেই, সামান্য পানি। একদিন খাবার ছিল না, এমনকি পানিও না। সৌভাগ্যক্রমে বৃষ্টি পড়া শুরু করল। আমাকে যে বাড়িতে রাখা হয়েছিল, তার বাইরে একটা পাত্র রাখল অপহরণকারীরা, সেটা ভর্তি হয়ে গেল। আমি সেই বৃষ্টির পানি খেয়েছিলাম, ওই পানি দিয়ে এক হাঁড়ি ভাত রান্না করা যেত। সেটাই আমাকে টিকিয়ে রেখেছিল,” বলেন তিনি।
নামা বলেন, জিম্মি থাকার সময় তিনি কেবল শনিবারই টিভি দেখতে পেতেন। এমনই এক শনিবার জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে জিম্মি চত্বরে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ তাকে নতুন অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।
“সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় আমি দেখেছি হাজার হাজার মানুষ এখানে পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে, আমিসহ সব জিম্মিদের ছবি হাতে স্লোগান দিচ্ছে, গান গাইছে। আমাকে যে ভুলে যাওয়া হয়নি, তা আপনারা আমাকে অনুভব করিয়েছেন,” বলেন সাবেক এ জিম্মি।
সরকারবিরোধী এসব বিক্ষোভের আগে তেল আবিবে এক দল জিম্মির পরিবার তাদের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধ অব্যাহত রাখায় নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করেছেন। জিম্মিচুক্তির বিরোধীতাকারী একজনকে প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধান হিসেবে ভাবছেন, এ নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন।
এ সংবাদ সম্মেলনে জিম্মি মাতানের মা আইনভ ঝানগৌকার নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অপহৃত বেসামরিকদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে তার কাছে অনন্ত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এক যুদ্ধই বেশি পছন্দের।”
“তিনি গাজাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চান, এমনকি ৫৮ জন রন আরাদর বিনিময়ে হলেও,” ১৯৮৬ সালে নিখোঁজ ইসরায়েলি পাইলট রন আরাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন ঝানগৌকার। ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও আরাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।
ঝানগৌকারের অভিযোগ, যুক্তবিরতি-জিম্মিমুক্তির চুক্তি না করে সরকার ‘সেনাদের যুদ্ধে পাঠিয়েই যাচ্ছে, জিম্মিদের কাঁধে ভর করে নিত্যনতুন বসতি বানাচ্ছে’।
“সব জিম্মিকে ছাড়াতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে, আমাদের এই সরকারকে হটাতে হবে,” বলেন এ নারী।