Published : 16 May 2025, 04:08 PM
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধের ইতি টানতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চাপে তিন বছরেরও বেশি সময় পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে প্রথম শান্তি আলোচনায় বসেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেইনের প্রতিনিধিরা।
যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক পর্যায়ে যে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হয়েছে, বসফোরাসের তীরে ডলমাবাচে প্রাসাদে এই বৈঠক তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে; কেননা উভয় পক্ষ ২০২২ সালের মার্চের পর আর একে অপরের সঙ্গে মুখোমুখি বসেনি।
তবে এ বৈঠকে বড় কোনো ‘ব্রেক থ্রু’র সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তার ওপর বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছেন, তার এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠক ছাড়া পরিস্থিতির বড় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার প্রথমে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেছেন, এরপর তুরস্ক, রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে আলোচনা শুরু হবে।
এ আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুতিনই। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপের নেতারা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে রুশ প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ দিয়ে আসছিলেন।
তার প্রতিক্রিয়ায় পুতিন রাশিয়া-ইউক্রেইন সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দেন। বৈঠকে পুতিনের উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা মহলে এক ধরনের আশাবাদ তৈরি হলে জেলেনস্কিও বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। ট্রাম্প বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কি বৈঠকে বসলে তিনিও তাতে যোগ দেবেন।
কিন্তু পরে ক্রেমলিন যে প্রতিনিধিদলের তালিকা প্রকাশ করে তাতে পুতিনের নাম না থাকায় বৈঠককে ঘিরে আশা ফিকে হয়ে যায়।
জেলেনস্কি পরে বলেন, বৈঠকে পুতিনের উপস্থিত হতে না চাওয়াতেই বোঝা যায় যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে তিনি খুব একটা আগ্রহী নন।
মস্কো বলছে, তারা এ আলোচনাকে ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে হওয়া আলোচনার ধারাবাহিকতা হিসেবেই দেখতে চায়।
পুতিনে ইউক্রেইনের ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ নামার কয়েক সপ্তাহ পর হওয়া ওই বৈঠকে রাশিয়া ইউক্রেইনকে তাদের সামরিক বাহিনীর আকার কয়েকগুণ ছোট করে ফেলাসহ কিইভের জন্য ‘অস্বস্তিজনক’ সব প্রস্তাব দিয়েছিল।
রুশ বাহিনীর দখলে এখন যুদ্ধপূর্ববর্তী ইউক্রেইনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূমি। পুতিনের এখনকার দাবিগুলো হচ্ছে, রাশিয়ার দখলে যাওয়া ভূমিগুলো ইউক্রেইনকে ছেড়ে দিতে হবে, নেটোতে যোগ দেওয়ার আশা চিরতরে ত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হতে হবে।
এসব দাবি মানাকে ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবেই দেখছে কিইভ; তারা দাবিগুলো তো প্রত্যাখ্যান করছেই উল্টো যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা অনেক দেশের কাছ থেকে ভবিষ্যতের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে।
শুক্রবারের আলোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা পরিচালক মাইকেল অ্যান্টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
রুশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে আছেন ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি। তার সঙ্গে থাকছেন রাশিয়ার একজন উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী, উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান।
বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির ঘোষণা অনুযায়ী, ইউক্রেইনের প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তার সঙ্গে থাকছেন ইউক্রেইনের গোয়েন্দা সংস্থার উপপ্রধান, সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফের উপপ্রধান ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে বৈঠকের আগে ইস্তাম্বুলের ডলমাবাচে প্রাসাদে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইউক্রেইনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়।
এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক ও ইউক্রেইন বিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত কিথ কেলগ।
ইউক্রেইনের দলে আছেন তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ, প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা।
আয়োজক তুরস্কের পক্ষে কথা বলছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।