Published : 10 Jun 2025, 07:18 PM
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা জলবায়ু পরিবর্তনরোধী আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ফিলিস্তিনিপন্থি ১২ অধিকারকর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করেছে।
সোমবার ভূমধ্যসাগরে ত্রাণবাহী ইয়ট ‘ম্যাডলিন’ দখলে নেওয়ার পর তেল আবিবের সেনারা এ অধিকারকর্মীদের আটক করেছিল।
থুনবার্গ ইসরায়েল ছাড়তে রাজি হওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে ফ্রান্সগামী এক ফ্লাইটে তাকে তুলে দেওয়া হয় বলে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে।
ফ্রান্স হয়ে থুনবার্গ সুইডেনে যাবেন।
থুনবার্গ রাজি হলেও একই ইয়ট থেকে আটক ৬ ফ্রেঞ্চ অধিকারকর্মীর মধ্যে ৫ জনই স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার আদেশনামায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যে কারণে তাদেরকে এখন ইসরায়েলের বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, বলেছে ফ্রান্স।
এ অধিকারকর্মীদের বহনকারী ‘ম্যাডলিন’ ইসরায়েলের নৌ-অবরোধ প্রত্যাখ্যান করে গাজায় ‘প্রতীকী’ ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, পথিমধ্যে ইসরায়েলি সেনারা ওই ইয়টটি দখলে নেয়।
তেল আবিবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ত্রাণবাহী নৌযানটিকে ‘সেলফি ইয়ট’ অ্যাখ্যা দিয়েছিল। সোমবার রাতে তারা জানায়, ‘ম্যাডলিনে’র আরোহীদেরকে তারা অ্যাশদোদ বন্দর থেকে তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে নিয়ে যাচ্ছে।
“যারা ইসরায়েল ছাড়ার কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে ও ইসরায়েল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাবে তাদেরকে ফেরত পাঠাতে বিচারিক কর্তৃপক্ষের সামনে হাজির করা হবে,” সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমনটাই বলে তারা।
পরে মঙ্গলবার সকালে তারা ‘গ্রেটা থুনবার্গ মাত্রই সুইডেনের (ফ্রান্স হয়ে) ফ্লাইটে চেপে ইসরায়েল ছেড়েছেন’ জানিয়ে সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মীর বিমানে বসে থাকার একটি ছবিও প্রকাশ করে।
এর আগে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো এক্সে এক পোস্টে লেখেন, “আমাদের কনসাল গত রাতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ছয় ফরাসি নাগরিককে দেখতে পেরেছেন। তাদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে রাজি হয়েছেন, তিনি আজই ফিরে আসবেন। বাকি পাঁচজন জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের মুখোমুখি হবেন।”
এই ৬ ফ্রেঞ্চ অধিকারকর্মীর নাম বলেননি বারো। তবে এদের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য রিমা হাসান এবং আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ আছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ম্যাডলিনে ফ্রান্স ও সুইডেনের পাশাপাশি ব্রাজিল, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও তুরস্কের নাগরিকরা ছিলেন।
ইয়টটি যেই গোষ্ঠী পরিচালনা করছিল, সেই ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) সোমবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছিল, যে যাত্রীরা স্বেচ্ছায় ইসরায়েল ছাড়তে রাজি হবে না তাদেরকে তেল আবিবের কাছে রামলে কারাগারে পাঠানো হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
“আমরা সকল স্বেচ্ছাসেবকের অবিলম্বে মুক্তি এবং চুরি হওয়া ত্রাণ ফেরত দেওয়ার দাবি অব্যাহত রেখেছি। ওই স্বেচ্ছাসেবকদের অপহরণ বেআইনি এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন,” বিবৃতিতে বলেছিল তারা।
ত্রাণের ইয়টটিতে শিশুখাদ্য, খাবার ও ওষুধ ছিল, বলছে এফএফসি।
গাজার দুরাবস্থা নিয়ে প্রচার জোরদার ও ভূখণ্ডটিতে ত্রাণ পৌঁছানোর লক্ষ্যে গত ১ জুন ইতালি থেকে রওনা হয়েছিল ইয়টটি।
রোববার ই্সরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছিলন, “ম্যাডলিন ফ্লোটিলা যেন গাজায় পৌঁছাতে না পারে, সেই নির্দেশনা আমি আইডিএফকে দিয়েছি।”
অধিকারকর্মীদের আটক করার পর কাৎজের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ম্যাডলিন’ ফ্লোটিলা অ্যাশদোদ বন্দরে পৌঁছানোর পর অধিকারকর্মীদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার ভিডিও দেখাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দলটি ‘মিডিয়া প্রভোকেশন’ করার চেষ্টা করেছে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য প্রচার পাওয়া।
“গাজায় সহায়তা পাঠানোর উপায় রয়েছে- এর সঙ্গে ইনস্টাগ্রামের সেলফির কোনো সম্পর্ক নেই।”
মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আগের বিবৃতিতে বলা হয়, “অননুমোদিতভাবে অবরোধ ভঙ্গের চেষ্টা বিপজ্জনক, অবৈধ এবং চলমান মানবিক প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে।”
সিএনএন লিখেছে, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে সরব সংগঠন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের নৌযান ‘ম্যাডলিন’ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছে।
আরোহীরা অনলাইন ট্র্যাকারের মাধ্যমে জাহাজের অবস্থান প্রকাশ করেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে সম্ভাব্য আটক হওয়ার প্রস্তুতিও তারা নিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের পতাকাবাহী বেসামরিক ইয়টটি সোমবার সকালে মিশরের উত্তরে ছিল এবং ধীরে ধীরে গাজা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল; কিন্তু পরে ট্র্যাকারটি বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে শনিবার থুনবার্গ সিএনএনকে বলেছিলেন, “আমরা জানি যে- এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মিশন এবং আমরা জানি যে, এর আগে এই ধরনের জাহাজে আক্রমণ, সহিংসতা এবং এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।”
ইসরায়েল গত মার্চের শুরুতে গাজায় সব মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেয় এবং ১১ সপ্তাহ ধরে কোনো সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকায় ইসরায়েল এখন ফের ভূখণ্ডটিতে সহায়তা ঢোকার সুযোগ দিচ্ছে। তবে সেই সহায়তার পরিমাণ যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় খুবই কম।
ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে বলেছে, মানবিক সংকট আরও খারাপ হচ্ছে এবং ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে।
এপ্রিলের শেষ দিকে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন অনাহারের মুখে রয়েছেন।
ত্রাণের জাহাজ 'ম্যাডলিন' এর দখল নিল ইসরায়েল, থুনবার্গরা আটক