Published : 25 Dec 2024, 08:12 PM
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। এ উপলক্ষে সারাবিশ্ব সেজেছে ক্রিসমাস ট্রির আলোয়, সঙ্গে নানান জমকালো আয়োজন।
কিন্তু যাকে ঘিরে এই আয়োজন সেই যীশু খ্রিস্ট্রের জন্মস্থান বেথলেহেমেই নেই কোনও আড়ম্বর, নেই আলোকসজ্জা, দর্শনার্থীর ভিড়, এমনকি বড়দিনের মূল আকর্ষণ ক্রিসমাস ট্রিও নেই। শহরজুড়ে কেবল বিষণ্ণতা।
অথচ জেরুজালেমের দক্ষিণপ্রান্তে অধিকৃত পশ্চিমতীরের ছোট্ট শহর বেথেলহেম পুরো বিশ্ব থেকে আসা পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের থেকে আসা আয়ের ওপর নির্ভরশীল, শহরটির কর্মচাঞ্চল্য মূলত তাদের ঘিরেই।
পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা এখানকার নেটিভিটি চার্চ দেখতে আসেন, যিশু যেখানে জন্মেছিলেন গির্জাটি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে বলে বিশ্বাস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের। কিন্তু এবার সেখানে পর্যটক আর পূণ্যার্থীদের কর্মচাঞ্চল্যের আশা নেই।
গাজায় যুদ্ধের কারণে দ্বিতীয় বছরের মতো বড়দিনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পারিবারিক সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
স্থানীয় লুথেরান যাজক রেভারেন্ড ডঃ মুন্থার আইজ্যাক মন্তব্য করেছেন, “আজকের দিনটা আনন্দ এবং উদযাপনের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গাজায় আমাদের ভাইবোনদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে আমরা সব ধরনের আনন্দ আয়োজন থেকে বিরত রয়েছি।”
বেথলেহেমে রেভারেন্ডের ইভাঞ্জেলিক্যাল লুথেরান গির্জায় শিশু যীশুর জন্মের দৃশ্যায়ন করা হয়েছে ধ্বংসস্তুপের ওপর। ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে দেওয়া ধর্মপোদেশেও কেবল গাজায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতির বয়ান।
আইজ্যাক তার ধর্মপোদেশে বলেন, "এটা হৃদয়বিদারক। বছরঘুরে আরেকটি ক্রিসমাস এসেছে কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়নি। তিনি আরও বলেন, "সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা এই বর্বরতা চলতে দিতে ইচ্ছুক, তাদের কাছে ফিলিস্তিনিদের জীবনের কোনও মূল্য নেই।”
ক্ষুদ্র ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অর্থ স্থানীয়দের অনেকেরই গাজায় পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব রয়েছে। ধর্মতত্ত্ববিদ ড. ইউসুফ, যিনি মূলত গাজা সিটির বাসিন্দা, বলেন, "আমার মা আমাকে বলেছিলেন যে, আমরা টেলিভিশনে যতটুকু দেখি তা যা ঘটছে তার এক শতাংশও না।”
তার বাবা-মা এবং বোন কয়েক শতাধিক খ্রিস্টানের মধ্যে রয়েছেন, যারা গত ১৪ মাসের বেশিরভাগ সময় গাজার দুটি গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন। তারা পুরো গাজার মানুষের মতো অনাহারে আছেন। বোমাবর্ষণের কারণে এবং চিকিত্সা যত্ন ও পরিষেবার অভাবে তাদের চোখে ঘুম নেই," বলেন ইউসুফ।
গাজায় যুদ্ধ চলছে ১৪ মাস ধরে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার জবাবে শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেলেও জাতিসংঘ ও অন্যরা তা নির্ভরযোগ্য বলেই মনে করে।
গাজায় এই যুদ্ধের সঙ্গে সমান তালে উত্তেজনা বেড়েছে পশ্চিম তীরেও। সেখানে অধিবাসীদের চলাচলের ওপর ইসরায়েল নতুন সব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সেইসঙ্গে প্রতিদিন জেরুজালেম কিংবা ইহুদি বসতিতে কাজ করতে ঢোকা হাজারও মানুষের অনুমোদন বাতিল করেছে।