Published : 03 Jun 2025, 09:15 PM
দুর্বল হতে হতে মৃত্যুর দিকে পা বাড়াচ্ছেন লায়লা সুইফ। ৮ মাসের বেশি সময় ধরে অনশন করে আসা এই নারীকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে কোনও সময় তার হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তবু থেমে নেই তার সংকল্প। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই চলছে অনশন।
লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতাল থেকে বিবিসি রেডিও ফোর টুডে প্রোগ্রামে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৬৯ বছর বয়সী ব্রিটিশ-মিশরীয় গণিত শিক্ষিকা লায়লা সুইফ বলেন, “আমি বাঁচতে চাই। খুব করে চাই। কিন্তু আমার মৃত্যুতেও যদি ছেলে মুক্তি পায়, তাহলে আমি মরতেও প্রস্তুত।”
লায়লার ছেলে আলা আবদেল ফাত্তাহ যুক্তরাজ্য ও মিশরের দ্বৈত নাগরিক। মিশরের অন্যতম প্রধান বিরোধী কণ্ঠস্বর তিনি। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় কায়রোয় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন অভিযোগে তিনি প্রায় টানা কারাবন্দি।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ায় আলা গ্রেপ্তার হন। তিনি কায়রোর ওয়াদি আল-নাতরুন জেলে বন্দি। তার সর্বশেষ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে এক ফেসবুক পোস্ট শেয়ারের অভিযোগে, যেখানে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে একজন বন্দির মৃত্যুর কথা উল্লেখ ছিল।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, আলার সাজা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিশর কর্তৃপক্ষ তার প্রি-ট্রায়াল হেফাজতের সময় গণনায় অস্বীকৃতি জানায়। সেই থেকেই অনশনে যান তার মা লায়লা সুইফ।
“ওর সাজা শেষ। তাও তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এটা অনৈতিক এবং অমানবিক,” বলেন লায়লা। অনশনের প্রথম কয়েক মাস শুধু হারবাল চা, কালো কফি আর স্যালাইনজাতীয় পানীয় পান করে টিকে ছিলেন তিনি।
ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি দিনে ৩০০ ক্যালরির তরল গ্রহণে রাজি হন—যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আলা'র মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে কথা বলেন।
কিন্তু ২০ মে থেকে তিনি আবার পূর্ণ অনশনে ফিরে গেছেন। বলছেন, এতদিনেও কোনও অগ্রগতি হয়নি।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার আবার হাসপাতালে ভর্তি হন লায়লা। চিকিৎসকরা তাকে গ্লুকাগন দেন—যা ব্যবহার করা হয় রক্তে চিনির মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে।
তিনি এখনও গ্লুকোজ নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তার শরীরে এখন ইলেক্ট্রোলাইট দেওয়া হচ্ছে স্রোতের মাধ্যমে। কিন্তু তার পরিবারের ভাষ্য, সপ্তাহান্তে তার গ্লুকোজ মাত্রা এতটাই কমে যায় যে তা মাপাও যাচ্ছিল না।
“কেউ বুঝতে পারছে না, তিনি এখনও কীভাবে জ্ঞান ধরে রেখেছেন,” বলেন লায়লার মেয়ে সানা সিফ। “তিনি বলছেন, তিনি মারা যাচ্ছেন। আমাদের সঙ্গে বিদায়ের কথাও বলছেন।”
জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রারি ডিটেনশন’ গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে জানায়, আলাকে আটক রাখা অবৈধ এবং কেবল মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকার কারণে তিনি বন্দি। তাদের আহ্বান—তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।
তবে মিশর এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদেরকে আলার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি অল পার্টি গ্রুপ, সাবেক রাষ্ট্রদূত জন ক্যাসন, এমনকি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও এর আগে আলা'র মুক্তির জন্য কড়া অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তবে লায়লার মেয়ে সানা বলছেন, “সরকার যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে না। ওকে (আলা আবদেল ফাত্তাহ) শুধু মুক্ত করলেই হবে না, মিশর থেকেও বের করে আনা দরকার।” তিনি আরও বলেন, মা'র দৃঢ়তা তাকে অনুপ্রাণিত করছে, একইসঙ্গে শঙ্কিতও করছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা আলা'র মুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার সকালে মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মিশর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েও যোগাযোগ করা হচ্ছে।”
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও গত ২২ মে মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন এবং আবারও আলাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিবিসি রেডিও ফোর টুডের সাক্ষাৎকারে আলার মা লায়লা সুইফের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যদি তিনি বেঁচে না থাকেন, তার বার্তা কী হবে? লায়লার জবাব ছিল—“আমার মৃত্যুকে হাতিয়ার বানান। আলা'কে মুক্ত করুন। আমার মৃত্যুকে বৃথা যেতে দেবেন না।”