Published : 18 May 2025, 12:24 PM
তুরস্কে মস্কো ও কিইভের মধ্যে বৈঠকের পর এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলের বৈঠকে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের আলোচকরা যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে একমত হয়েছেন। কিইভ সেখানে গিয়েছিল যুদ্ধবিরতির আশা নিয়ে, কিন্তু মস্কো এমন সব নতুন দাবি জানিয়েছে যাতে একমত হওয়া কঠিন ছিল বলে ভাষ্য ইউক্রেইনের এক কর্মকর্তা।
এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার ভার কার্যত ট্রাম্প নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন। শনিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে তিনি সোমবার ইউক্রেইনে যুদ্ধ থামাতে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন বলে জানান।
মস্কোতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে কথোপকথনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে রুশ বার্তা সংস্থাগুলোকে নিশ্চিত করেছেন, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাশিয়া ইউক্রেইনে তাদের ভাষায় ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করার পর ২০২২ সালের মার্চেই দুই পক্ষের আলোচকরা প্রথম মুখোমুখি বসেছিলেন, কিন্তু ওই আলোচনা যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ওই বৈঠকের তিন বছর পর শুক্রবার ফের দুই পক্ষ আলোচনায় বসেছিল। সেখানে মস্কোর আলোচকরা বলেন, রাশিয়ার দাবি করা ভূখণ্ডগুলো থেকে ইউক্রেইন তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করলেই তারা যুদ্ধবিরতি মেনে নেবেন।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি সোমবার পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়) পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন।
“ফোনালাপের বিষয়বস্তু হবে ‘রক্তক্ষয়’ বন্ধ করা, যা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫ হাজারের বেশি রুশ ও ইউক্রেইনীয় সেনার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এর পাশাপাশি বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা হবে,” লিখেছেন তিনি।
পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পর জেলেনস্কি এবং নেটো সদস্যভুক্ত কয়েকটি দেশের প্রধানদের সঙ্গেও কথা হবে তার।
“আশা করছি এটা একটা ফলপ্রসূ দিন হবে, যুদ্ধবিরতি আসবে, এবং এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যে যুদ্ধ কখনো হওয়াই উচিত ছিল না, তা থামবে,” বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তুরস্কের আলোচনায় পুতিন অংশ নিলে ট্রাম্পও সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্ট সেখানে না গিয়ে পাঠান একদল আলোচককে।
তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে বিরতি দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই পুতিন ও জেলেনস্কিকে চাপ দিয়ে আসছেন।
শুক্রবার ইস্তাম্বুলের বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কী কী শর্ত দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি ক্রেমলিন। এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকে দুই পক্ষ একে অপরের সঙ্গে এক হাজার করে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। তবে এই বন্দি বিনিময় কখন হবে তা জানায়নি তারা।
এদিকে শনিবার উত্তরপূর্ব ইউক্রেইনের সুমি অঞ্চলে ‘রুশ ড্রোন হামলায় ৯ বাসযাত্রী’ নিহত হওয়ার পর জেলেনস্কি মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
“এটা ছিল ইচ্ছাকৃত বেসামরিক হত্যা। হত্যাকাণ্ড বন্ধে রাশিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছাড়া, কঠোর চাপ ছাড়া রাশিয়া সত্যিকারের কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হবে না,” বলেছেন তিনি।
বেসামরিকদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা রাশিয়া বলেছে, তারা সুমি অঞ্চলে একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে।
পূর্ব ইউক্রেইনে মস্কো আরেকটি শহর দখলে নিয়েছে বলেও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্তা থেকে জানা গেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ফোনে কথা বলে রাশিয়া-ইউক্রেইনে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইতিবাচক ভূমিকাকে’ স্বাগত জানিয়েছেন।
রুবিও পরে সিবিএসের ‘ফেইস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে বলেছেন, রাশিয়ানরা যুদ্ধবিরতি ও পরবর্তী আলোচনার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য যেসব ভাবনা ও শর্ত প্রয়োজন, সেগুলোর একটি তালিকা নিয়ে কাজ করছে বলে ল্যাভরভ তাকে জানিয়েছেন।
“আমার মনে হয় এখন আপনার প্রশ্ন হচ্ছে, ‘তারা কি আমাদের ঘোল খাওয়াচ্ছে?’, সেটাই আমরা বের করার চেষ্টা করছি,” রোববার বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউক্রেইন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ তার পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়াকে একটি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য পূরণে জেলেনস্কি তুরস্কে তার আলোচকদের পাঠিয়েছিলেনও।
কিন্তু সেখানে মস্কোর আলোচকরা যুদ্ধবিরতির আগে ইউক্রেইনকে দোনেৎস্ক, ঝাপোরিঝিয়া, খেরসন ও লুহানস্ক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের একটি সূত্র।
রুশ আলোচকরা বলেছেন, এসব এলাকা থেকে কিইভের সেনা চলে যাওয়ার পরই কেবল কোনো যুদ্ধবিরতি হতে পারে।
এ দাবি এবং রাশিয়ার আলোচকরা অন্যান্য যেসব শর্ত হাজির করেছেন তা যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত খসড়াচুক্তিতে ছিল না, যেটা গত মাসে মস্কোর সঙ্গে আলোচনার পর ওয়াশিংটন উপস্থাপন করেছিল।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ ইউক্রেইনের এ ভাষ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উল্টো বলেছেন, “আলোচনা পর্দার আড়ালে হওয়াই উচিত।”
তিনি বলেন, পরবর্তী কাজ বন্দিবিনিময় সম্পন্ন করা, এরপর দুইপক্ষের মধ্যে আরও কিছু কাজ থাকবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেইনের দুই প্রেসিডেন্ট একে অপরের সঙ্গে বসতে পারেন এমন সম্ভাবনাও রয়েছে, তবে অবশ্যই ‘সুনির্দিষ্ট কিছু সমঝোতার’ পর, বলেছেন পেসকভ। এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।