Published : 10 Jun 2025, 12:16 AM
বিক্ষোভ দমাতে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস নগরীতে ন্যাশনাল গার্ডের সেনা মোতায়েন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
সেখানে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে শত শত মানুষ বিক্ষোভে নামার দুই দিন পর এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার ন্যাশনাল গার্ডের ২০০০ সেনা ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় এ নগরীতে মোতায়েন করা হয়।
অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযানের প্রতিবাদে নগরীটিতে শুক্রবার থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলছে।
ন্যাশনাল গার্ড ডাকার যুক্তি হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, এ আন্দোলন কেন্দ্রীয় সরকারের আইন প্রয়োগে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। এটিকে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।
তবে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম রোববার বলেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনকে বলেছেন যে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে সৈন্য মোতায়েন অবৈধ; তাদের যেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ট্রাম্পের আইনি ভিত্তি কী ছিল
রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা নির্ধারণ করে দেওয়া আইনের অধীনেই মূলত ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আদেশ দেন।
প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের ক্ষমতা দেওয়া আছে আইনটির ‘টাইটেল ১০’-এ। সেখানে বিশেষ কিছু প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন– যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের মুখে পড়লে, বিদ্রোহ হলে বা বিদ্রোহের আশঙ্কা থাকলে এবং নিয়মিত বাহিনী দিয়ে আইন প্রয়োগ করা না গেলে।
ট্রাম্প বিক্ষোভগুলোর মধ্যে ‘বিদ্রোহ’ বা ‘বিদ্রোহের সম্ভাবনা’ দেখতে পাওয়ার যুক্তিতে সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন।
আইনে ন্যাশনাল গার্ডের কী ক্ষমতা?
১৮৭৮ সালের ‘পোস কমিট্যাটাস আইন’ অনুযায়ী, ন্যাশনাল গার্ডসহ মার্কিন সামরিক বাহিনী সাধারণত বেসামরিক আইন প্রয়োগে অংশ নিতে পারে না।
কিন্তু ‘টাইটেল ১০’ এর ‘১২৪০৬’ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিরাপত্তা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পদ সুরক্ষা করতে পারবে।
যেমন– ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারবেন না। কিন্তু যারা গ্রেপ্তার করতে পারেন, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বা কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট কর্মকর্তাদের সুরক্ষায় তারা কাজ করতে পারবেন।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় কী প্রভাব
মার্কিন সংবিধানের যে প্রথম সংশোধনী, সেখানে নাগরিকদের সমাবেশের অধিকার, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যেভাবে বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েন করেছেন, তা উদ্বেগজনক। এছাড়া নিজের বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনা দমনে তিনি কতদূর যেতে পারেন, এটি তার একটি লক্ষণও।
ট্রাম্পের পদক্ষেপ কি আইনি চ্যালেঞ্জে পড়বে?
বাম ও ডানপন্থি চার আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ মোকাবেলায় ‘টাইটেল ১০’ ব্যবহারের সিদ্ধান্তটি ‘উসকানিমূলক’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। আর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের সমর্থন ছাড়াই।
ডেমোক্র্যাট দল থেকে নির্বাচিত এ গভর্নর শুরু থেকে বলে আসছিলেন যে, এ ধরনের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যালিফোর্নিয়ার বিক্ষোভ ‘বিদ্রোহের’ পর্যায়ে পড়ে না এবং ফেডারেল আইন বাস্তবায়নে কোনো বাধাও সৃষ্টি করেনি।
‘টাইটেল ১০’ এ বলা হয়েছে, এ ধরনের আদেশ রাজ্যের গভর্নরের মাধ্যমে জারি করা উচিত। তবে এটি আইনি কোনো প্রতিবন্ধকতা মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে গভর্নরদের প্রেসিডেন্টের আদেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ক্যালিফোর্নিয়া কী মামলা করতে পারবে?
ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য একটি মামলা করতে পারে; সেটা এই যুক্তিতে যে ‘টাইটেল ১০’ অনুযায়ী ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। কারণ এখানে ‘বিদ্রোহ’ বা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি তৈরি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি মামলার নিষ্পত্তি হতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। মামলার রায় পক্ষে আসবে, সেই নিশ্চয়তাও নেই। আর এ ধরনের মামলা যতটা আইনি, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ট্রাম্পের হাতে আর কী আইন আছে
ট্রাম্প আরও বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন ১৭৯২ সালের ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে, যেখানে সৈন্যদের বেসামরিক আইন প্রয়োগে সরাসরি অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, বিক্ষোভকে ‘বিদ্রোহ’ হিসেবে দেখিয়ে নাগরিকদের বিরুদ্ধে সৈন্য মোতায়েন করাটা আইনি দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ আইনে মূলত সহিংস ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বা বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের আওতায় পড়ে না।
‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কয়েকটি বড় সংকটে প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন– ১৭৯৪ সালের হুইস্কি বিদ্রোহ; আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর কু ক্লুক্স ক্লানের উত্থান এবং সবশেষ ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে দাঙ্গায় এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেনা মোতায়েন হয়েছে গভর্নরের অনুরোধে। গভর্নরের অনুরোধ ছাড়া সবশেষ কোনো প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেন ১৯৬৫ সালে। ওই বছর আলাবামার মন্টগোমারিতে নাগরিক অধিকার আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দিতে সৈন্য পাঠান প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন।
আরও পড়ুন
এলএতে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন বেআইনি: ক্যালিফোর্নিয়ার
লস অ্যাঞ্জেলেসে আইসিই বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ