Published : 22 Nov 2024, 12:35 AM
আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি মুডিস বাংলাদেশের ঋণমান কমানোর ঘটনায় এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল পেতে আরও সময় লাগবে।
বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দ্রুত মুডিস বাংলাদেশে সফর করে অর্থনীতির সার্বিক দিক মূল্যায়ন করবে। এরপর সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের পরামর্শ নেবে। তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও উন্নয়নকে মূল্যায়ন করবে।
গত সোমবার বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি রেটিং বা ঋণমান আবার কমিয়েছে মুডিস রেটিংস। সে ক্ষেত্রে সরকারের ইস্যুয়ার ও সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিংস ‘বি১’ থেকে ‘বি২’-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির পূর্বাভাসে পরিবর্তন এনে ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘ঋণাত্মক’ করেছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে মুডিস।
মুডিস রেটিং এজেন্সি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের রেটিং বা ঋণমান দিয়ে আসছে। এর পর থেকে ১৪ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো সংস্থাটি তাদের পূর্বাভাস ‘স্থিতিশীল’ থেকে ‘নেতিবাচক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মুডিসের এই পূর্বাভাস বলছে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম হবে, যা রপ্তানি ও পোশাক খাতের সম্ভাবনাকে মেঘাচ্ছন্ন করতে পারে। অন্যদিকে রেটিং কমানোর কারণে বিদেশি ঋণের সুদের হার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগেও বাধা আসতে পারে।
মুডিস জানিয়েছে, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ঋণমান কমানো হয়েছে। এই বিষয়গুলো এসেছে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থেকে, যার ফলে দেশটিতে একটি সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আর্থিকখাতের সংস্কারের জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আরও গতির সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে।
ঋণমান অবনমন করায় অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া ‘ইতিবাচক দিকগুলোতে’ প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করে দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মূলত বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ও নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টিকে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
সরকারের পালাবদলের কারণে দেশে এক রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাতে দেশের অর্থনীতি, তারল্য প্রবাহ ও ব্যাংকিংখাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঘাটতি পূরণে আরও বেশি স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরশীল করে তুলবে বলে মনে করে মুডিস। এছাড়া সম্পদের গুণগত মানের ঝুঁকির কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থার পুঁজি ও তারল্যসংক্রান্ত দুর্বলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রের দায়সংক্রান্ত ঝুঁকিও বাড়ছে।
প্রবাসী আয়ের ধারা ইতিবাচক হলেও ও বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা আরও বেশি ঋণ দিলেও বহিঃস্থ দুর্বলতাসংক্রান্ত ঝুঁকি আগের মতই রয়েছে। এজন্য গত কয়েক বছর ধরেই দেশের রিজার্ভ কমছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।