Published : 05 Jul 2025, 12:35 AM
অধিকৃত পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিন শহর সিনজিলের পূর্ব প্রান্তজুড়ে পাঁচ মিটার উঁচু ধাতব বেড়া বসিয়েছে ইসরায়েল। এই বেড়ার একটি মাত্র প্রবেশপথ খুলে রেখে চারপাশ ভারি স্টিলের ফটক বসিয়ে এবং রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে সিল করে দিয়েছে তারা।
চলছে ইসরায়েলি সেনাদের কঠোর নজরদারিও। শহরটিকে এভাবে অবরুদ্ধ করে রাখাকে কারাগারের সঙ্গেই তুলনা করেছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। সাত সন্তানের জনক ৫২ বছর বয়সী মুসা শাবানেহ বলেন, ‘সিনজিল এখন এক বিশাল কারাগার’।
নার্সারিতে গাছের চারা লাগিয়ে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন মুসা। সেই নার্সারির মাঝখান দিয়েই চলে গেছে ইসরায়েলের দেওয়া বেষ্টনী। এতে রোজগারের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান মুসা।
তিনি বলেন, “আমাদের এখন নার্সারিতে যাওয়া নিষেধ। আমার যত গাছ ছিল, সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, শেষ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের জীবিকাও কেড়ে নিল।”
ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মিত দেয়াল ও চেকপয়েন্টগুলো পশ্চিম তীরের প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনি বাসিন্দার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ছিল।
কিন্তু গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনেকেই এখন এ ধরনের বেষ্টনী নাটকীয়ভাবে বেড়ে যেতে দেখছেন। এতে শহর ও গ্রামগুলো এক স্থায়ী অবরোধের মধ্যে পড়ে গেছে।
সিনজিল শহরের চারপাশে ইসরায়েলের দেওয়া বেষ্টনী বিশেষত এরই এক মোক্ষম উদাহরণ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা কাছের রামাল্লাহ-নাবলুস মহাসড়কের সুরক্ষায় এই বেড়া তৈরি করেছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “এলাকাটিতে বারবার সন্ত্রাসী ঘটনা, প্রধান পথে পাথর নিক্ষেপ এবং জনশৃঙ্খলা বারবার বিঘ্নিত হওয়া ঠেকাতেই বেড়া বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে অঞ্চলটির বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া যাবে।”
একটি পথ খোলা থাকায় শহরটিতে অবাধে যাতায়াত করা কোনও সমস্যা হবে না বলেই দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু বাস্তবতা হল, শহরের বাসিন্দাদের এখন সরু ঘুরপথ দিয়ে গাড়িতে করে বা পায়ে হেঁটে একমাত্র প্রবেশপথটিতে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
শহরের ডেপুটি মেয়র বাহা ফোকা বলেছেন, নতুন বেড়ার কারণে ৮ হাজার মানুষ মাত্র ১০ একর এলাকার মধ্যে আটকে পড়েছে। শহরের বাসিন্দাদের মালিকানাধীন ২ হাজার একর জমিই বেষ্টনীর বাইরের দিকে পড়েছে। ফলে তারা এই জমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
বাহা ফোকা বলেন, “মানুষজনকে ভয় দেখাতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মনোবল ভেঙে দিতে দখলদার (ইসরায়েল) বাহিনী এই নীতি নিয়ে থাকে।”
তবে ইসরায়েল বলছে, “পশ্চিম তীরে বেড়া ও ব্যারিকড দেওয়া জরুরি। কারণ, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল অঞ্চলটি দখলে নেওয়ার পর থেকে সেখানে যে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা রয়েছে তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।”