Published : 10 Dec 2024, 09:58 PM
সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগে গত ৫ অগাস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৮৮টি মামলা এবং ৭০ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
পুলিশের প্রতিবেদনের বরাতে মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব বলেন, “২২ অক্টোবরের পরের ঘটনাগুলোর তথ্য সংগ্রহ ও সন্নিবেশ চলছে। এটা পেলে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। এতে গ্রপ্তার ও মামলার সংখ্যা হয়ত আরও বাড়বে।''
সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঢাকার তুরাগ ও নরসিংদীতে সহিংসতা ঘটার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ''প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে। সংখ্যালঘু সংক্রান্ত এ ধরনের তথ্য আমরা নিয়মিত জানাতে পারব।''
মামলার তথ্য তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মামলা হয়েছে ৬২টি। এসব মামলায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩৫। পূজামণ্ডপ, উপসনালয়কেন্দ্রিক সহিংসতায় পুলিশের কাছে সরাসরি রিপোর্ট করা তথ্য অনুযায়ী মামলা হয়েছে ২৬টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৫ জনকে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ''কাউকে রাজনৈতিক পরিচয়ে তো গ্রেপ্তার করা হয় না, যাকে সন্দেহভাজন ধরা হচ্ছে বা অভিযোগ আসছে, তাকেই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।''
ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ বিগত ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ছিলেন মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে তিনি হয়ত সংখ্যালঘু। রুলিং পার্টির সদস্য ছিলেন, তার ওপর আক্রমণ হয়েছে। এটাকে আপনারা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন।
“উনি কী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, নাকি সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে? এক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নাকি সম্প্রদায়ের বিষয়টি? যাই হোক, যেহেতু সহিংসতা ঘটেছে, তাই আমরা মামলা করেছি। আমরা এ বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছি।''
সরকার নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না– এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, “সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এটা সরলীকরণ হয়ে গেল। আমরা চেষ্টা করছি।
“আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা আছে। পুরো বিশ্ববাজার আমরা মনিটর করছি। সয়াবিন ও পাম অয়েলের ক্ষেত্রে অক্টোবর-নভেম্বর থেকে মার্কেট ঊর্ধ্বমুখী। ৯২০-৯৪০ ডলারের টনের তেল এখন ১২০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। সয়াবিনের মার্কেট প্লেয়ার কিন্তু কম। তিন থেকে চারটি কোম্পানি মূলত মার্কেটটা নিয়ন্ত্রণ করে।”
তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলো কোন ‘ফাউল প্লে’ করছে কিনা, অনেক দেশে তা দেখার জন্য কম্পিটিশন কমিশন আছে। আমরা খুব দ্রুত প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করব। তারা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বলেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেকে কলকাতায় বসে ‘বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য’ দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কী?
জবাবে প্রেস সচিব বলেন, “ছাত্রলীগের ছেলেরা অনেক লুটপাট চুরিচামারি করে ওখানে গেছে। তারা অনেক ধরনের কথাবার্তা ওখানে বসে বলছেন। তবে এটা কে কীভাবে নিচ্ছেন, এটা হল বড় কথা।
“আমাদের কথা হল, তারা গত ১৫ বছরের অপশাসনের প্রতীক ছিল। এদেরকে কারা ‘মাইলেজ’ দিচ্ছে, এটা তাদের ইস্যু। এ বিষয়ে আমরা কমেন্ট করতে চাই না।”
ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গও ওঠে। প্রেস সচিব আলম, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আগামী বছর আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সেপ্টেম্বর-অক্টোরের দিকে এই সম্মেলন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ভেন্যুসহ অন্যান্য বিষয় মার্চ-এপ্রিলের দিকে ঠিক করা হবে।
“আশা করছি সব দেশ এতে অংশগ্রহণ করবে; বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ রোহিঙ্গা বিষয়ে যারা খুবই আগ্রহী, তাদের সবাই থাকবে। জাতিসংঘের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা হয়েছে।”
এক সাংবাদিক বলেন, রাখাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ কৌশলগত কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা?
জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ''পুরো পরিস্থিতি আমরা খুবই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সার্বিক রোহিঙ্গা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধান উপদেষ্টা একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি গভীরভাবে এটা পর্যবেক্ষণ করবেন।”
অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।