Published : 05 Jul 2025, 11:55 PM
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আহতদের শরীরে এখনও যে বুলেট রয়ে গেছে সেগুলো সরানোর মতো অবস্থায় নেই বলে তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
শনিবার ঢাকার পান্থপথে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বোচ্চটা দিয়ে তাদের চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়েছে।
”আহতদের কারও কারও শরীরে ১০০ বা ২০০ পিলেট রয়ে গেছে। এগুলো বের করার উপায় পৃথিবীর কোথাও নাই। বেশিরভাগ চিকিৎসক মনে করেন ওগুলো থেকে গেলে টিস্যুর যতটুকু ক্ষতি হবে সেগুলো সরাতে গেলে তার চেয়ে অনেক বেশি টিস্যুর ক্ষতি হবে।”
চিকিৎসদের চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যার শরীরে এগুলো, পিলেট রয়ে গেছে তার শারীরিক মানসিক কষ্ট আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু এটা সমাধান অযোগ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটার এই মুহূর্তে কোনো সমাধান নাই।”
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ফাউন্ডেশন এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, “জুলাইয়ে শহীদ বা আহতদের পরিবারকে কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা বা আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পুনর্বাসন করা যায়। যতই আর্থিক সহায়তা করা হোক তা দিয়ে পুনর্বাসন সম্ভব না।
“আমরা চেষ্টা করেছি সরকারি-বেসরকারি চাকরির মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করানোর জন্য। কিন্তু একটা কমন সমস্যা হচ্ছে বেসরকারি চাকরি কেউ করতে চায় না। আহত বা শহীদ পরিবারের প্রত্যাশা থাকে তারা সরকারি চাকরি করবে তাও উচ্চ পর্যায়ের। আমরা অনেক বেসরকারি চাকরি ম্যানেজ করেছি, অনেককে দিয়েছি। আমরা ফরম ছেড়েছি, যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তাদের প্রথম প্রশ্ন থাকে এটা সরকারি না বেসরকারি। বেসরকারি হলে তারা আর কোনো যোগাযোগ করেন না।”
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক এই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, জুলাইয়ে আহতদের অনেকেরই এখন আর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে অনেকেই হাসপাতাল ছাড়তে চায় না।
“আমরা একটা অ্যাসেসমেন্ট করেছি কেন তারা থাকতে চাচ্ছে। তাদের ভেতর একটা ট্রমা কাজ করছে তারা যদি হাসপাতাল থেকে চলে যায় তাহলে তাদের আর কেউ দেখবে না। খোঁজ নেওয়ার মত কেউ থাকবে না। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আহত বাসায় চলে গেলেও যেন সুবিধাটা পায়।”
সভায় সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, জুলাই আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ভার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর দেওয়া ভুল ছিল। এটা শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ ছিল না।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে যাদের চিকিৎসা দরকার ছিল। স্বাভাবিকভাবেই সে সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর পুরো বিষয়টি এসে পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পুরো বিষয়টি নিয়ে হিমশিম খেয়েছে।
“আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে তিনটা মিনিস্ট্রি সমান্তরাল কাজ করার দরকার ছিল। স্বাস্থ্য ছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কারণ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটা এমআইএস ছিল দেশজুড়ে। এসব মন্ত্রণালয় মিলে কাজ করলে সমন্বয় ভালো হত।”