Published : 08 Oct 2024, 08:24 PM
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বেড়ে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও নেত্রকোণায় সৃষ্ট বন্যায় এ পর্যন্ত ২ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর মধ্যে বন্যায় এ পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের সবাই শেরপুর জেলার।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার দুপুরে বন্যা সম্পর্কিত নিয়মিত প্রতিবেদনে বলেছে, তিন জেলার ১৩ উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৫২০টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জেলাগুলোতে মোট ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে ১ হাজার ৫১৭ জন মানুষ ও ৯৪৮টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, বন্যায় শেরপুরের ৫ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ৫৯ হাজার ৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনও পানিবন্দি ১৩ হাজার ৮০টি পরিবার।
বন্যায় শেরপুরের নলিতাবাড়ী উপজেলার ছয়জন আর নকলা উপজেলার দুইজন মারা গেছেন।
তারা হলেন- ইদ্রিস আলী (৬৫), জহরা (৭০), আমিজা খাতুন (৪৫), মো. হাতেম আলী (৩০), আলমগীর হোসেন (১৬), জিমি (৮), আব্দুর রাজ্জাক (৫২) ও রাহিম (৫)।
শেরপুরের ৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০৬ জন মানুষ ও ৭৩৭টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় জেলায় ১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে নয়টি টিম কাজ করছে।
বন্যাকবলিত ময়মনসিংহের তিন উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ২০০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় ৩২ হাজার ৪৪০টি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
ময়মনসিংহে টানা বৃষ্টিতে নতুন করে প্লাবিত আরও ২৫ গ্রাম
বন্যা: ময়মনসিংহে ৫০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি
এ জেলায় মোট ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ১ হাজার ১০৬ জন মানুষ এবং ২১১টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের সহায়তায় ২৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে; যেখানে ছয়টি টিম কাজ করছে।
অপরদিকে বন্যাক্রান্ত নেত্রকোণার পাঁচ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের মোট ২৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ২২ হাজার পরিবার।
এ জেলার মোট সাতটি আশ্রয়কেন্দ্রে ১০৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের সহায়তায় জেলায় কাজ করছে পাঁচটি মেডিকেল টিম।
দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে
শেরপুরে বন্যা: উজানে উন্নতি হলেও ভাটিতে অবনতি
কুড়িগ্রামে বৃষ্টি-ঢলে ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা
বাংলাদেশের উজানে পাহাড়ি ঢলে অগাস্টের মাঝামাঝিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার পর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে টানা ভারি বৃষ্টিতে রংপুর, নীলফামারীসহ উত্তরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে এমন বৃষ্টিপাতে নদীর পানি বেড়ে ডুবেছে ময়মনসিংহ বিভাগের তিন জেলা।
মঙ্গলবার বিকালের তথ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, এ বিভাগের নীল জিঞ্জিরাম নদীর গোয়ালকান্দা পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আর নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
রংপুরে আকস্মিক বন্যায় হাজারো মানুষ পানিবন্দি
নীলফামারীতে ঘরবাড়ি থেকে নামছে পানি, খাদ্য সংকটে বানভাসিরা
বন্যা কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ময়মনসিংহ বিভাগের জিঞ্জিরাম নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। অপরদিকে, ভুগাই-কংস ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাতে বন্যা তথ্যে বলা হয়েছে, আগামী তিন দিন ময়মনসিংহ বিভাগ ও এর উজানে অতিভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম। এর পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী তিন দিন পর্যন্ত ভুগাই-কংস নদীর পানি কমতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
অগাস্টের বন্যার এমন ভয়াল রূপ কেন?
আগামী তিন দিন নেত্রকোণা জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানিও কমতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হতে পারে।
অপরদিকে আগামী এক দিন জামালপুর জেলার জিঞ্জিরাম নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন হ্রাস পেতে পারে। আগামী এক দিন পর্যন্ত জামালপুর জেলার জিঞ্জিরাম নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন ধীর গতিতে উন্নতি লাভ করতে পারে।