Published : 27 Nov 2024, 01:08 AM
সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে নানা ষড়যন্ত্র চলার কথা তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোনো চক্রান্তের ফাঁদে না পড়ে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে।
একই সঙ্গে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকাণ্ড এবং নাশকতায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার রাতে সংগঠনের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ এক পোস্টে বলা হয়েছে, “সারাদেশের সম্মানিত আলেম-ওলামাসহ সাধারণ জনগণকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। কোনো চক্রান্তের ফাঁদে পা দেব না আমরা। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই।
“আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। আমাদের এই সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার জন্য নানান ষড়যন্ত্র চলছে। ধৈর্য ধৈর্য এবং ধৈর্য।”
রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় চিন্ময় দাশকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পরদিন মঙ্গলবার চট্টগ্রামে নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম আদালত থেকে তাকে কারাগারে নেওয়ার সময় সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ওপর হামলা হয়।
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়কে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে ওই আইনজীবীকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পেইজ থেকে রাতে প্রচারিত আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা রুখে দিন। ধৈর্য ধারণ করুন। আমাদের একতাই আমাদের সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করবে।”
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ থেকে দেওয়া পোস্টে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, “সারাদেশের সকল সাধারণ জনগণকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন। নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়ে দয়া করে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না।
“আমাদের বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। আমরা কোনোভাবেই আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেব না। ৫ অগাস্টের পর থেকেই একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আমাদের দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য ক্রমাগত চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। দয়া করে নিজেরা নিজেরা কোন্দলে জড়িয়ে কুচক্রি এই মহলের হীন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের পথ তৈরি করে দিয়েন না।”
চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে তিনি লেখেন, “কোন নির্দিষ্ট সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকলে সে সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।“
এদিকে আইনজীবী নিহত হওয়ার ঘটনায় সবাইকে ধৈর্য ধারণ ও শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে নিজের ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে নাতিদীর্ঘ বার্তায় তিনি লেখেন, দ্রুতই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে যেসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি হবে।
"অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দাবি দাওয়া আন্তরিকভাবে বিবেচনা করেছে। কিন্তু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বিভিন্ন সভা সমাবেশে মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।"
পোস্টে তিনি লেখেন, “রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া সত্ত্বেও কোনো আইনগত পদক্ষেপ না নিয়ে বিভিন্ন সভা করে বেড়াচ্ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ। মূলত এই ধরনের তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং বাংলাদেশ ও জুলাই অভ্যুত্থানকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করা। ভারতীয় মিডিয়া এরকম মিথ্যা প্রচারণা বরাবরই করে আসছে।
”আজকে চট্টগ্রাম আদালতে যেভাবে একজন আইনজীবীকে চিন্ময় কৃষ্ণের সমর্থকরা কুপিয়ে হত্যা করলো তা নজিরবিহীন। দেশে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েই চিন্ময় কৃষ্ণ কাজ করছিল এবং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে এ ধরনের সন্ত্রাসী সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করেছে।
“ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বরাবরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে একটা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে চেয়েছে। এখন ভারতীয় মিডিয়াও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা করে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নাশকতাকারী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীদের আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করবে।”