Published : 04 Jun 2025, 05:56 PM
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ঘোষণার পর ঈদুল আজহা ঘিরে নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি শিথিল হলেও নগর ভবনের তালা খোলেনি।
এতে টানা ২২দিন ধরে বন্ধ আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন।
ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নগর ভবনের তালা এখনও খোলেনি। এ কারণে অফিসে যেতে পারছেন না তারা।
“আমি আজও গিয়েছিলাম। কিন্তু ভেতরে যাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে দুপুর পর্যন্ত আশপাশে ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে এসেছি।”
তবে সামনে ঈদ থাকায় বুধবার পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যুৎ এবং পরিবহন এই তিনটি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগর ভবনে প্রবেশ করতে পেরেছেন।
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইশরাক সমর্থক, ডিএসসিসির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা-কর্মী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা।
টানা আন্দোলন ও কর্মসূচির কারণে সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ আছে। এ জন্য নাগরিক সেবায় যে ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, যার দায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ওপর দিয়েছেন ইশরাক সমর্থকরা। এবং উপদেষ্টাকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বুধবার দুপুরে নগর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। এ অবস্থায় ভেতরে যেতে পারছে না কেউ। মেয়র ব্লকের পাশের একটি ছোট দরজার খোলা আছে। তাতে কিছু লোকজন ভেতরে আসা-যাওয়া করছেন। নগর ভবনের নিচতলায় বিক্ষিপ্তভাবে বসে থাকতে দেখা গেছে ডিএসসিসির কর্মচারীদেরও।
এখন কারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে জানতে চাইলে একজন কর্মচারী বলেন, “আমরা কোনো আন্দোলন করছি না। এই আন্দোলন ঢাকাবাসীর আন্দোলন।”
সেখানে থাকা আরেকজন কর্মচারীর কাছে জানতে চাইলে তিনিও একই উত্তর দিলেন।
তবে ওই কর্মচারীসহ অন্যরা দুপুর দুইটার দিকে সেখানে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছিলেন। তারা ইশরাক হোসেনকে দ্রুত মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, তা না হলে নগর ভবন ‘এভাবেই অবরুদ্ধ করে রাখা হবে’।
সরকার ব্যবস্থা না নিলে নিজেই শপথ নেবেন ইশরাক
পরে নগর ভবন কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কোষাধ্যক্ষ আবদুল কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকাবাসীর যৌক্তিক দাবির সঙ্গে ডিএসসিসির কর্মচারীরা সবাই একমত। এ কারণে আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। আজ শেষ কর্মদিবস যে কারণে যেগুলো শুধু জরুরি সেবা সেখানে কাজ চলছে। বাকী সব অফিস বন্ধ, দেখা গেছে অনেকে আসেই নাই।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আন্দোলন শিথিল করেছেন, কিন্তু নগর ভবন তার আওতায় পড়েনি।
“উনার লোকজন যারা এতদিন কর্মসূচি পালন করছিলেন তারা আসবে না। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকবে। কর্মচারী ইউনিয়ন অফিসিয়ালি কোনো আন্দোলন করছে না। আন্দোলন করছে ঢাকাবাসী। নগর ভবন বন্ধ থাকায় আজও আমি অফিসে আসিনি। তবে ঈদ সামনে থাকায় বর্জ্য, পরিবহন এবং ভান্ডার বিভাগের লোকজন অফিস করতে পারছেন।”
মঙ্গলবার বিকেলে নগর ভবনের সামনে কর্মসূচিতে এসে ইশরাক হোসেন বলেন, “সামনে ইদ, জনগণের ভোগান্তি ও জনগণের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে আমরা বর্তমান নগর ভবনের অবরোধ এবং ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কিছুটা শিথিল, কিছুটা বিরতি দিয়েছি।
“ছুটির পরে শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণেকে সামনে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”
বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি যেভাবে
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
ইশরাকের শপথ: আদালতের আদেশের কপি ইসিতে
এক মেয়রকেই শপথ পড়াতে 'ব্যর্থ', ৩০০ এমপিকে কী করে: সরকারকে ইশরাক
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।
আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।
তার সমর্থকদের আন্দোলনের মধ্যে ‘শপথ না দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে’ দায়ের করা রিট আবেদনটি ২২ মে সরাসরি খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেয়।
রিটকারীর এ ধরনের রিট করার এখতিয়ার না থাকার যুক্তিতে আবেদনটি খারিজ করে হাই কোর্ট।
হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সোমবার আপিল বিভাগে আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী মামুনুর রশিদ। আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়।
সেই লিভ টু আপিলের শুনানি করে আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয় বৃহস্পতিবার।
এই জটিলতায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি।