Published : 10 May 2025, 04:11 PM
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বই ছাপা ও বিলি করার দায়িত্ব চেয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
তার মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) শুধু শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজে নিয়োজিত থাকবে।
শনিবার দুপুরে মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধন এবং প্রাথমিক শিক্ষা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি কথা বলছিলেন।
বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা তদারকির দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত তদারকির দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় পালন করে। তবে এনসিটিবি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান হলেও তা প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করে।
গতবছর সরকারের পট পরিবর্তনের পর পাঠ্যবই পরিমার্জনে অনেকটা সময় লেগে যাওয়ায় চলতি বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে অনেকটা দেরি হয়েছে এনসিটিবির। শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় মাসে এসে সব শিক্ষার্থী সব বই পেয়েছেন।
এমন বাস্তবতায় প্রাথমিকের বই ছাপা ও বিলি করার দায়িত্ব চাইলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার ও অতিথি হিসাবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বই ছাপা ও বিতরণের দায়িত্ব চেয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, "সত্যি বলতে কি অনেক দেশেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এরকম ভাগ নাই। আর আমাদের ভাগটা একটু অসম্পূর্ণ ভাগ। হতে পারতো প্রাথমিক শিক্ষা বলে আমরা যেটা আইডেন্টিফাই করব আপ টু এসএসসি অর এইচএসসি সেটা একটা, আর উচ্চ শিক্ষার জন্য একটা আর বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য আরেকটা। আমাদের ভাগটা কেমন একটু যেন। যাই হোক যেটা আছে সেটা তো আর অতিক্রম করার ব্যাপার নাই। সেজন্য কখনোই শিক্ষার কাজটা সম্পূর্ণ হবে না যদি না দুইটা মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করে।"
এনসিটিবির প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, "এনসিটিবি একটা প্রতিষ্ঠান। সেজন্য স্বভাবতই একটা প্রশ্ন আসে যেহেতু মন্ত্রণালয় দুইটা এনসিটিবিও দুইটা ভাগ হয়ে যাক? আমি যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষায় আছি। আমি যদি পার্টিজানশিপ মনোভাব পোষণ করি, আমি বলব যে এনসিটিবি একটা প্রাথমিকের জন্য হোক। কিন্তু আমার এতটুকু কাণ্ডজ্ঞান আছে যে, এই দাবিটা সত্যি অর্থেই শিক্ষার জন্য উপযোগী নয়। ফলে এখানে কোন পার্টিজানশিপ প্রদর্শন করতে চাই না। আসলে এনসিটিবি একটাই থাকা দরকার।
"তবে আমরা যেটা চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে, এনসিটিবির কাজ হচ্ছে, তারা কারিকুলাম প্রণয়ন করবে, পুস্তক প্রণয়ন করবে; ছাপা-বিলি করা ম্যানেজারিয়াল কাজ, সেটা কেন তারা করবে? সে দায়িত্বটা আমরা চাচ্ছি। সেটা হচ্ছে প্রসঙ্গ। আমরা চাচ্ছি না এনসিটিবিকে ভাগ করি।"
শিক্ষা যে গুরুত্বপূর্ণ ‘সে বোধ জাতিগতভাবে আমাদের নেই’ মন্তব্য করে অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, "আমরা কথায় কথায় অনেক বড় কথা বলি, কিন্তু কাজে নেমে দেখেন; প্রতিটা ক্ষেত্রে আপনি উপলব্ধি করবেন আপনি যার কাছে কাজে যাচ্ছেন উনি ঠিক উপলব্ধি করেন না শিক্ষাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটার একটা প্রমাণ হচ্ছে এই বাজেটে আমরা কতটুকু দিচ্ছি শিক্ষার জন্য?"
মামলার বাধায় অনেক পদ শূন্য পড়ে আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, "৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদশূন্য। মামলার কারণে পদগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না।"
পদশূন্যতা ও জবাবদিহিতার অভাব শিক্ষার ‘মানোন্নয়নে বাধা’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন।
১৪টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এবং শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার ১৮টি ক্যাটাগরিতে (বালক ও বালিকা) প্রথম স্থান অধিকারীদের পুরস্কৃত করা হয়।
বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছাবে তো?