Published : 11 Aug 2024, 05:28 PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডি, প্রভোস্ট, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ও রেজিস্ট্রারকে পদত্যাগ করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আরও ১২ দফা দাবি তুলে ধরেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বেলা ৩টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা।
রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জবি কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা।
প্রশাসনের শীর্ষ পদধারীদের পদত্যাগের পাশাপাশি আন্দোলনে গিয়ে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে সমন্বয়করা মোট ১৩টি দাবি তুলে ধরেন।
১. বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, প্রক্টরসহ সম্পূর্ণ প্রক্টরিয়াল বডি, প্রভোস্ট, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ও রেজিস্ট্রারকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ক্যাম্পাসের ভেতরে লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
৩. নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সার্বিক খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
৪. আগে ছাত্রলীগের পদধারী ছিল এবং এর ওপর ভিত্তি করে ক্যাম্পাসে চাকরি পেয়েছেন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকসহ যারা এখনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাথে সম্পৃক্ত, নিহত ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঠাট্টা-টিটকারি করেছেন, তাদের আগামী দুই দিনের মধ্যে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হবে৷
৫. আগামী সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যে জকসুর নীতিমালা প্রণয়ন করে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. দখল হলগুলো অবিলম্বে দখলমুক্ত করতে হবে এবং মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ দিতে হবে।
৭. নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে ।
৯. ক্যাফেটেরিয়ার জন্য বাজেট বরাদ্দ রেখে খাবারের মান উন্নত করতে হবে এবং অতিশীঘ্রই নতুন ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
১০. নারী শিক্ষার্থীদের কমন রুমের মান উন্নত করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে শক্ত আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
১১. ক্যাম্পাসের আশেপাশে চাঁদাবাজি, রাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১২. পোষ্য কোটা বাতিল এবং রাজনৈতিক নিয়োগ-বাণিজ্য আজীবনের জন্য বন্ধ করতে হবে।
১৩. গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠানের রূপ দিতে হবে।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক স্বর্ণ আক্তার রিয়া বলেন, “আমরা আগামীকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, হল প্রভোস্ট অধ্যাপক দীপিকা রানী, প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ পুরো প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে।
“যদি তারা এ সময়ে পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি বহনকারী মাইক্রোবাস ফেরালেন শিক্ষার্থীরা
এদিকে দুপুরে সমন্বয়করা যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভা করছিলেন তখন খবর আসে সাদা রঙের একটা মাইক্রোবাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খবর পাওয়ার পর ওই মাইক্রোবাসকে ধাওয়া করেন শিক্ষার্থীরা।
গাড়িটি নিম্ন আদালত এলাকার সামনে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা পথ রোধ করতে সক্ষম হন। পরে নথিপত্র উদ্ধার করে গাড়িসহ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। উদ্ধার হওয়া নথি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত দেওয়া হয়।
উদ্ধার হওয়া নথিপত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া আলোচিত শিক্ষক নাসির আহম্মেদের নথিপত্রও ছিল বলে জানান শিক্ষার্থীরা। যিনি হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদানের অপেক্ষায় আছেন।
তবে গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার ফাইল ছিল বলে তথ্য দেনে প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মাইক্রোবাস আটকিয়েছে, সেখানে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার ফাইল আছে, আর কিছু না।”