Published : 07 May 2025, 01:00 AM
সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, নিজেদের স্বার্থে যার সঙ্গে ইচ্ছা তার সঙ্গে দেখা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কে কী বলল, যায় আসে না।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্বার্থে, আমরা সার্বভৌম রাষ্ট্র, আমরা যার সঙ্গে ইচ্ছা তার সঙ্গে দেখা করব। কে কী বলল, যায় আসে না।
“আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছি এবং সেটা বাস্তবায়ন করছি, এটা আপনারা দেখছেন। মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করেছে কিন্তু তারাওতো কথা বলছে। তারাতো যুদ্ধবিরতির কথা বলছে। তাই না?”
প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিয়ে মিয়ানমার সম্ভবত একটা রিঅ্যাকশন দিয়েছে, একটা চিঠি দিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থান কী?
উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, “আরেকটা জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে, আমাদের সীমান্তের ওপারে এখন নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির। এটা তো আমাদের সীমান্ত এবং এটা আমাদের সার্বভৌম সীমান্ত। এই সীমান্ত আমাকে ম্যানেজ করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। এটাতো একটা আন্তঃসীমান্ত। এজন্য ওপারে যেই থাকুক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব।
“তাতমাদো (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) যদি পারে, তারা আসুক ওপাশে। তাদের সঙ্গেতো আগে যোগাযোগ ছিল। তারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।”
আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর এপ্রিলে জেনারেল মিন অং হ্লায়িংয়ের সরকার ঢাকায় কূটনৈতিক পত্র দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সেই চিঠিতে জান্তা সরকার ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে। তবে এখন অবধি বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।
আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বিপরীতমুখী কি না- এমন প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, “ওপারে সীমান্তে আরাকান আর্মি আছে। তার সঙ্গেতো আমার কাজ করতেই হবে, তাই না?”
মিয়ানমারের বক্তব্যের জবাব দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা আছে, নিশ্চয়ই আছে। আপনারা দেখলেন যে, কিছুদিন আগে আমরা সাহায্য পাঠিয়েছি, তাদের অনুরোধের অপেক্ষা করি নাই। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।
“তাদের সঙ্গে বাণিজ্য যোগাযোগও আছে। আর এই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা আছে।”
ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা সরকারপ্রধানের আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে খলিলুর বলেন, “আলোচনা চলতেই থাকবে। আপনি একটা সমস্যার সমাধান করতে চাইলে সব পক্ষের সঙ্গে আপনার একটা যোগাযোগ রাখতে হবে। তা না হলে এটা আপনি সমাধান করতে পারবেন না।”
একদিকে মিয়ানমারের ভৌগোলিক অখণ্ডতার কথা বলা এবং আরাকান আর্মির যোগোযোগ সাংঘর্ষিক কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “মোটেই না। ওপারে বর্ডারে তারা আছে, তার সঙ্গেতো আমার কাজ করতেই হবে। তাই না? এটা প্র্যাকটিক্যাল বেসিস।”
মানবিক করিডোর নিয়ে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ জাতিসংঘ করবে কি না, এমন প্রশ্নে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “সকল পক্ষেরই কমিউনিকেশন থাকবে। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শেষ অবধি আমরা দেখব, সকল পক্ষ রাজি কি না। রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেব, এমন কোনো কথা নেই। কারণ, আমাদের অন্যান্য বিষয় আছে…
“আপনাদেরকে বললাম, আরাকানের যে নতুন কর্তৃপক্ষ তৈরি হচ্ছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব চাই। আমরা চাই, সেখানে রোহিঙ্গা যারা আছেন তাদের ওপর যেন কোনো অত্যাচার না হয়। তাদের বিরুদ্ধে যেন বৈষম্যমূলক আচরণ করা না হয়। তারা যেন আবার দলে দলে বাংলাদেশে না আসে। এ কথাগুলো মনে রাখতে হবে, জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতেই আমরা আর মানব না। দিস ইজ আওয়ার রেড লাইন।“
গত দেড় বছরে এক লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। তাদের বসবাসের জন্য ঘর বরাদ্দ চেয়ে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, “এই জায়গাটা খুব স্পর্শকাতর। এর আগেও যারা এসেছেন তারা আমাদের বন-বাদাড় কেটে আমাদের এখানে আমাদের পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।”
নতুন করে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চায় তাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দেবে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি যাতে আর রোহিঙ্গারা না আসে। আর এই কথাটাটি আমরা খুব জোরের সাথে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি। তাদেরকে আমরা যে কয়েকটি কথা জাতিসংঘের মাধ্যমে আমরা জানিয়েছি, তার একটা হচ্ছে, আমরা আরাকানের যে নতুন প্রশাসন তৈরি হচ্ছে, তার সব স্তরে রোহিঙ্গাদের দেখতে চাই।
“যদি সেটা তারা না করে, তাহলে এটা হবে জাতিগত নিধনের একটা নিদর্শন, যেটা আমরা কোনোভাবে সমর্থন করতে পারি না। আমরা কখনও সেটা করব না। এই কাজ যদি তারা না করেন, তাদের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হবে।“
এ বার্তার জবাব পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা প্রশ্ন করেছি, উত্তর পেলে বিচার-বিবেচনা করে দেখব কী ধরনের জবাব পাচ্ছি। এখানে কিন্তু রাখঢাক নাই। এটা সাদাকালো প্রশ্ন। আপনি হয় জাতিগত নিধনের পক্ষে বা বিপক্ষে।
“আমরা এ ধরনের জাতিগত নিধন কোনোভাবে সমর্থন করি না, এটা পৃথিবীতে যে কোনো জায়গাতে। এটা হচ্ছে, আরাকান আর্মির জন্য এটা টেস্ট। এবং আমরা অপেক্ষা করছি, এ প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারছেন কি না।”
মিয়ানমারের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধে জড়াবে না বাংলাদেশ: খলিলুর রহমান