Published : 14 Nov 2024, 01:25 PM
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (কুইক রেন্টাল) সংক্রান্ত আইনের দায়মুক্তির দুটি ধারা বাতিল ঘোষণা করেছে হাই কোর্ট।
একইসঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পুরো কার্যক্রম পরিচালনায় পদক্ষেপ নিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক, সঙ্গে ছিলেন মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম।
এ আইনের ‘পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার’ সংক্রান্ত ৬(২) ধারা ও ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’ সংক্রান্ত ৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম রিট আবেদনটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়।
এ দুটি ধারা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল আদালত।
রায়ে বলা হয়, “আইনের ৬(২) ধারা সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ৯ ধারাটি সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাজেই ৯ ধারাটি বাতিলযোগ্য। সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আইনের ৬(২) ও ৯ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।”
সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের ২ ধারায় বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্বে কোন চুক্তি বা দলিল প্রণয়ন বা সম্পাদন করা হইলে উক্ত কর্তৃত্বে অনুরূপ চুক্তি বা দলিল প্রণয়ন বা সম্পাদন করিবার জন্য রাষ্ট্রপতি কিংবা অন্য কোন ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হইবেন না, তবে এই অনুচ্ছেদ সরকারের বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যধারা আনয়নে কোন ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ণ করিবে না।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সংকট দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে এসব কেন্দ্র থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে অনেক টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, যা আসে করদাতাদের পকেট থেকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে।
এসব ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বৈধতা দিতে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’। শুরুতে দুই বছরের জন্য এ আইন করা হলেও পরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়।
রায়ে এও বলা হয়, আইনি জটিলতা এড়াতে ৬(২) ধারায় সংশ্লিষ্ট চুক্তির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে কনডন (মার্জনা) করা হলো। তবে চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কার্যক্রম কিছু শর্তসাপেক্ষে পুনরায় দেখার অধিকার সরকারের থাকবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে সাময়িক এই কনডন প্রযোজ্য হবে না।
দেশে ১৩৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ৪০টি পিডিবি মালিকানাধীন। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আইনটির ৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, “বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যে কোন ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫ এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিত সংখ্যক অথবা একক কোন প্রতিষ্ঠানের সহিত যোগাযোগ ও দরকষাকষির মাধ্যমে উক্ত কাজের জন্য মনোনীত করিয়া ধারা ৭ এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।”
রায় ঘোষণার পর আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “পাবলিক টেন্ডার ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। কোনো টেন্ডার ছাড়াই তারা চুক্তি করেছে। ৬ (২) ধারায় বলা আছে, তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক তারা টাকা পাবে।
“মানে ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, তারা ২০ মেগাওয়াট সাপ্লাই দেবে আর ১০০ মেগাওয়াটের টাকা পাবে। আসলে এটা লুটপাটের বিধান হয়েছে। একটা প্রজাতন্ত্রে হতে পারে না। এই ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছে।”
আইনটির ৯ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলে বিবেচিত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।”
আইনজীবী শাহদীন বলেন, “৯ ধারায় বলা হয়েছে, ৬(২) ধারায় কোনো চুক্তি হলে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। এতে আদালতের এখতিয়ার এ আইন রহিত করেছে। এটা তো হতে পারে না।
“আদালত বলেছে, ৬(২) এর অধীনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে চুক্তিগুলো হয়েছে, সেগুলো সরকার পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবে।”
আরও পড়ুন