Published : 12 May 2025, 11:09 PM
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে লক্ষ্য করে ‘বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের’ প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১১০ নাগরিক।
সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সরকারকে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে এবং কমিশনকে সমর্থন ও সুরক্ষা দিতে হবে। ‘বিদ্বেষমূলক’ বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলছেন তারা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন খাতে ১১টি সংস্কার কমিশন করে। এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে ৪৩৩টি সুপারিশ রয়েছে।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরই এসব সুপারিশ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। কথা ওঠে নারী কমিশন নিয়েও।
দেশের ইসলামপন্থিদের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হেফাজতে ইসলাম নারী সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে, জামায়াতে ইসলামীও কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
এমন অবস্থায় সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ১১০ নাগরিক বলেন, “নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আদর্শিক অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে জনমনে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে সেসব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও বিতর্কের নিশ্চিত সুযোগ রয়েছে।
“তা না করে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, এটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হওয়াটাও স্বাভাবিক।"
বিবৃতিতে বলা হয়, "সব নারীর প্রতি অপমানসূচক, বিদ্বেষমূলক, অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের এবং সাধারণভাবে নারীদের ওপর সহিংসতার উসকানিও দেওয়া হচ্ছে। আমরা এ ধরনের বিবেচনাবর্জিত দাবি ও প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে কমিশনের সদস্য ও নারীর প্রতি অযাচিত আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।"
কয়েকটি দাবি তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, "কমিশন ও কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যানের আহ্বান আমরা নাকচ করছি। আমরা আশা করছি, কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলোর ওপরে বিস্তারিত ও গঠনমূলক আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু করার দিকে সরকারের পক্ষ থেকে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় আমরা বিশেষজ্ঞ, গবেষক, শিক্ষক ও সুধী সমাজের অন্যান্যদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি।"
তারা বলছেন, "সরকারই কমিশন গঠন করে নির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণ করেছে এবং কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে। কমিশনের সদস্যরা তাদের নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকে সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাই সরকারকে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।"
বিবৃতি সই করা নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন- সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. পারভীন হাসান, নাগরিক কোয়ালিশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আইরিন খান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনিজীবী সারা হোসেন, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফেলো ও প্রযুক্তিবিদ সাবহানাজ রশীদ দিয়া, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সেলিম রায়হান, ড. ইমরান মতিন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, আলোকচিত্রী শহীদুল আলম, প্রকাশক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা।
আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া, নাগরিক কোয়ালিশনের মাসুদ রানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, নারীপক্ষের নির্বাহী সদস্য সাদাফ সায্, কলগেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, নারীপক্ষের সাফিয়া আজীম, নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোশতাক চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি অব বাফালোর সহযোগী অধ্যাপক নাদিন শান্তা মুরশিদ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক অধ্যয়ন পরিচালক নাঈম মোহায়মেন, নাগরিক কোয়ালিশনের মো. রুবাইয়াত সারওয়ার, চিকিৎসক রুমি আহমেদ খান ও পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট শফিকুর রহমানও আছেন বিবৃতিদাতার তালিকায়।
সই করেছেন অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদ, অর্থনীতিবিদ হুমায়ুন কবির, সাইফুল খন্দকার, আমিনুল ইসলাম ইমন, চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহ মাসুম শামীম, সাংবাদিক আকিব মো. শাতিল, সাদিক মাহমুদ, আইনজীবী সাইফ শাহ মোহাম্মদ, আসিফ ইকবাল, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদ খান আপেল, ইঞ্জিনিয়ার সুবাইল বিন আলম, আইনজীবী এহতেশামুল হক, সাংবাদিক সাদিক মাহবুব ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, সাংবাদিক সিমু নাসের, রাজনৈতিক কর্মী সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান, অর্থনীতিবিদ তৌফিকুল ইসলাম খান ও আসিফ সালেহও।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, আইনজীবী নাফিউল আলম সুপ্ত, আইআইডির নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ, অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, আইনজীবী আবিদ হোছাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, অভিনয়শিল্পী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা, সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির (এসআরএস) নির্বাহী পরিচালক সানজিদা সুলতানা, ‘কর্মজীবী নারীর’ অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক রওশন আরা, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল ইসলাম দেওয়ান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী ফিরোজ আহমেদ, ব্যারিস্টার ফাতেমা ওয়ারীথা আহসান ও সাংবাদিক রুহিনা ফেরদৌসও আছেন বিবৃতিদাতার তালিকায়।
এদের বাইরে সই করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা খানম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরমিন্দ নীলোর্মি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিরদৌস আজিম, ড. সাকিব মাহমুদ, ড. মির্জা হাসান, সৈয়দা সেলিনা আজিজ, স্পেস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোশফেক আরা শিমুল, সাংবাদিক রাফিয়া তামান্না, অ্যাক্টিভিস্ট লাবণী মণ্ডল, কাজলী সেহরীন ইসলাম, ফেরদৌস আরা রুমী, ফেরদৌস আরা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষক দীপ্তি দত্ত, গণিতবিদ নাফিসা রায়হানা, মনজুরুল মাহমুদ ধ্রুব, সাংবাদিক সুস্মিতা পৃথা, সৈয়দা নূর-ই-রায়হান ও ফাতিহা পলিন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দা নীলিমা দোলা, মৌসুমী আহমেদ, আহমাদ আহসান, প্রলয় বড়ুয়া, থিয়েটারকর্মী নাজিফা তাসনিম খানম তিশা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনশী সুলাইমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নায়রা খান, ব্যারিস্টার প্রিয়া আহসান চৌধুরী, ব্যারিস্টার, মেহনাজ রাব্বানি, অ্যাক্টিভিস্ট শামীম আরা নীপা, সেঁজুতি মাকসুরাত, সোমা দত্ত, হাবিবা নওরোজ, শায়লা আহমেদ, আদনান এম এস ফাকির, সোহেলা নাজনিন, নুসরাত জাহান, মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, নুজহাত সাফা, মাহবুবা আক্তার, শামারুহ মির্জা, ইসলামুল হক, শামারুখ মহিউদ্দীন, শ্রাবন্তী দত্ত, জাফর সোবহান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, আইনজীবী জীশান খান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার ও আইনজীবী আফজাল খানও এ বিবৃতিতে সই করেন।
আরও পড়ুন-
'নারী সংস্কার কমিশন খারাপ কী বলেছে, ধর্ম সংস্কার তো করতে বলেনি'