Published : 28 Dec 2023, 10:07 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি দেশের তরুণদের কোনো বিষয়ে বৈষম্যের শিকার দেখতে চান না। আঞ্চলিকতা বা লৈঙ্গিক, কোনো কারণে কেউ পিছিয়ে থাকবে- এটা তিনি চান না তিনি চান, সবাই কাজ করে নিজের জীবনকে উন্নত করবে। সেই নিশ্চয়তাটুকুই দিতে চান।
তিনি বলেন, “আমি চাই তারা প্রত্যেকে একটা অধিকার নিয়ে সমাজে দাঁড়াবে এবং সেইভাবে কাজ করবে। এই অবস্থাটা আমরা সৃষ্টি করেছি।”
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) আয়োজিত লেটস টক অনুষ্ঠানে তরুণের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত শুক্রবার রাতে ধারণ করা অনুষ্ঠানটি প্রায় এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে তরুণদের ভাবনা ও তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলো জেনে নেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তাদের নানা প্রশ্নের জবাবও দেন।
২০১৮ সালে লেটস টক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তরুণদের মুখোমুখি হন শেখ হাসিনা। এবারের অনুষ্ঠানে তিনি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি এবং তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণ বিষয়ে কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে হোক, পঞ্চগড়ে হোক, দক্ষিণের সুন্দরবনে হোক, সব জায়গায় ছেলে মেয়ে, মানুষ সমানভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। কাজ করবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের জীবনকে উন্নত করবে, সেই নিশ্চয়তাটুকু আমরা দিতে চাই।”
ট্রান্সজেন্ডার ও প্রতিবন্ধীরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে অধিকার নিয়ে সমাজে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয়ে কী ভাবনা
প্রশ্নোত্তর পর্বে পার্বত্য অঞ্চল ও ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতিনিধিত্বকারী মনীষা মীম নিপুণ বলেন, “কীভাবে আমরা আমাদের সমাজকে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের প্রয়োজনগুলোর প্রতি আরও সহানুভূতিশীল করতে পারি?”
তার আরও প্রশ্ন ছিল, “২০৪১ সালে আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশে সবাইকে একত্রিত করে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে ২০৪১ সালে আমাদের জায়গাটা কোথায় হবে এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের (ট্রান্সজেন্ডার) কাছে কী প্রত্যাশা রাখেন?”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কাউকে আলাদাভাবে দেখেন না।
“আমি এখানে মানুষকে মানুষ হিসেবে মনে করি। এখানে নারী-পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গের (ট্রান্সজেন্ডার) যারাই হোক, সকলেরই আমাদের সন্তান। প্রত্যেকটা পরিবার তাদেরকে গ্রহণ করে।
“আমার এটাই আকাঙ্ক্ষা, সকলে যার যার মেধা মননকে ব্যবহার করে দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারবে, এই চিন্তাটা সবার মাথায় থাকতে হবে।”
‘দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার এনেছে প্রতিবন্ধীরা’
বাংলাদেশ হুইলচেয়ার স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নূর নাহিয়ান সারা দেশে প্রতিবন্ধীদের খেলাধুলা নিয়ে কাজ করেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি পছন্দ করেন ক্রিকেট খেলতে। হুইল চেয়ারে বসে দুর্দান্ত সব শট খেলা এই ব্যাটসম্যানও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবন্ধীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার জন্য অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নাহিয়ান বলেন, “অনেক কাজ হচ্ছে প্রতিবন্ধীদের জন্য। কিন্তু তারপরও অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। অনেক ভবনে নিজেদের মত করে প্রবেশের সুযোগ পাই না। শারীরিকভাবে বিশেষ-সক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এই ধরনের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বাড়ানোর জন্য সরকারের পরিকল্পনা আছে কি না।”
জবাবে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরার পাশাপাশি পরিকল্পনার কথাও জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের যারা প্রতিবন্ধী চলাফেরার জন্য র্যাম্পের ব্যবস্থা, লিফলেটের ব্যবস্থা, শুধু তাই না, টয়লেটের ব্যবস্থা, নতুন যত প্রজেক্ট যা তৈরি করছি, সব ক্ষেত্রে আমরা করে দিচ্ছি। বিশেষ করে ট্রেনিং দেওয়া, খেলাধুলা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সেটাও আমরা করছি।”
দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি পুরস্কার প্রতিবন্ধীরাই নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের সংসদ ভবনের কাছে একটা বিরাট মাঠ আমি তৈরি করছি শুধুমাত্র প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণের জন্য। সাভারে একটা একাডেমি তৈরি করে দিচ্ছি অটিজম এবং যারা শারীরিকভাবে সমস্যায়, তাদের জন্য। একটা ক্রিকেট টিমকে তো একটা অনুদান দিয়ে ব্যবস্থাই করে দিয়েছি খেলাধুলা করার জন্য।
“যদি কোথাও স্পেশাল অলিম্পিক হয়, আমি সেটা আমি কিন্তু সব ধরনের সহযোগিতা করি। সুস্থরা যা না পারে… ৭১ টা ট্রফি নিয়ে আসল, তার মধ্যে ২১টা স্বর্ণ জয় করল আমাদের প্রতিবন্ধীরা, বিশেষ অলিম্পিকে। আমি দেখলাম তারাই তো ভালো পারে।”
‘প্রতিবন্ধীদের এখন কেউ লুকিয়ে রাখে না’
দেশে প্রতিবন্ধী এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের সবার সঙ্গে মেলামেশা করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আগের মত লুকিয়ে রাখতে হয় না, তারা কিন্তু সমাজে একটা স্থান পেয়েছে।”
দেশের যুব সমাজের অনেকেই এই ধরনের ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করায় আরও আশা দেখার কথাও বলেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুবকদের তরুণ প্রজন্মের অনেকের মাথায় এখন প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের নিয়ে কাজ করার। এমন চিন্তা থাকে, তাহলে ভালো কিছুই হবে। আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
‘ডে কেয়ার সেন্টার থাকবে সব জায়গায়’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ আর তাহসিন জাহান কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কিন্তু এখনও প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পর চাকরি থেকে অব্যাহতি নিচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। সরকারি খরচে ডে কেয়ার করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে?”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যখন ১৯৯৬ এ সরকার গঠন করি তখনই সচিবালয়ে দেখি কোনো ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ আছে কি না, সেখানে ডে কেয়ার সেন্টার করে দেই। এখন কিন্তু আমাদের প্রত্যেকটা প্রজেক্টে ‘ডে কেয়ার সেন্টারের’ কথা বলা আছে। গার্মেন্ট সেক্টরে যারা কাজ করেন তাদের আশপাশে সব জায়গায় কিন্তু ‘ডে কেয়ার সেন্টার’ করার পরিকল্পনা নিচ্ছি।
“মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করে দিয়েছি, যেটা ছিল তিন মাস। কর্মজীবী মায়েদের জন্য একটা ভাতা দিয়ে থাকি।”