Published : 08 Dec 2024, 11:15 PM
সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভেদ ভুলে নতুন বাংলাদেশে আলোকিত মানুষ হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
নতুন প্রজন্ম এ ধরনের ‘বিভেদ’ চায় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোববার দুপুরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন শেষে এ মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করেছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র।
জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশ যে বড় বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে গেছে সেটি তুলে ধরে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, “যারা সংস্কৃতি চর্চা করেন তারা তো সবার প্রতি একই ধরনের উদারতা দেখাবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২০১৪ সালের দিকে শাহবাগের সাংস্কৃতিক আড্ডাগুলোতে পূজা, বড়দিন- এগুলো নিয়ে আলোচনা হতো। কিন্তু ঈদ নিয়ে কথা বলা একটুও স্মার্ট হিসেবে মনে করা হতো না।
“এই যে আমরা কাউকে ‘অপর’ ভেবেছি আবার কেউ আমাদের ‘অপর’ ভেবেছে। আমি মনে করি, এই অপর ভাবা বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো কিছু না “
তিনি বলেন, “সামনে, এই বিপ্লবের পরে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ চাই এবং নতুন প্রজন্ম যে নতুন বাংলাদেশ চায়, আমি মনে করি, নতুন প্রজন্ম এই ‘অপরায়ন’ থেকে দূরে থাকতে চায়। তারা আমাদের বহু ভাষা, ধর্ম, মতের মানুষ মিলে মিশে থাকুক, এটাই চায়। কেউ কাউকে হেয় না করুক, এটা তারা চায়। যদি এটি করা যায়, তাহলে সত্যিকার অর্থে আমরা আলোকিত মানুষ হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে পারবো। আমরা সেই আলোকিত মানুষ হওয়ার পথেই রওনা দিয়েছি। জুলাই সেদিকে আমাদের নিয়ে যাক।”
গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক অধঃপতন দৃশ্যমান হলেও ‘ভেতরে’ সাংস্কৃতিক অধঃপতন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ফারুকী।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র নিয়ে স্মৃতিচারণ করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হয়নি। আমার পড়াশোনা হয়েছে আসলে রাস্তাঘাটে। মানুষের মুখ দেখে তাদের চেহারা দেখে, মানুষের সঙ্গে মিশে। তখন পাবলিক লাইব্রেরি আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এ দুইটা জায়গাতে আমি খুব পড়তে আসতাম। জীবিকা নির্বাহের জন্য আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতাম, সেটার সোর্স ম্যাটারিয়ালগুলো সংগ্রহ করতে হত এ দুইটি লাইব্রেরি থেকে।”
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রকে সহযোগিতা করবে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার বেশ বড়রকমের ভুমিকা রাখে এবং সরকার অর্থনৈতিকভাবেও নানারকম সহযোগিতা করে। এখানে কিন্তু সরকারের নিজের কোনও টাকা নেই, টাকা জনগণের। জনগণের টাকা জনগণের কাজেই ব্যয় করতে হয়।
“এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারও জনগণের কাজ এবং এই কাজে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকতে পারছে বলে আমি মনে করি যে, মন্ত্রণালয় তার কাজ ঠিকঠাক করছে। আমরা সামনে এই কাজ নিয়ে আরও এগোবো। আরও অনেক আলোচনা আমরা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে করবো। এটাকে কীভাবে আমরা আরও ছড়িয়ে দিতে পারি, সেটি নিয়ে কাজ করবো।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুবিভাগ) নাফরিজা শ্যামা, বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন ও মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন বিভাগের অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারিয়া মাহবুব।