Published : 04 Jun 2025, 09:50 PM
হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ঢুকে গেছেন হজ করতে সৌদি আরবে যাওয়া ব্যক্তিরা; সেলাইবিহীন সাদা কাপড় (ইহরাম) পরে মিনার উদ্দেশে যাত্রার মাধ্যমে যা শুরু হয়েছে।
অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীর মিনায় সমবেত হয়েছেন। বুধবার (৮ জিলহজ) তারা সেখানে পৌঁছেছেন।
বুধবার ফজর (ভোরের নামাজ) পড়ে যোহরের ওয়াক্তের আগেই মিনায় পৌঁছাতে হয়। যাবার পথে তাদের কণ্ঠে থাকে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা…।
হজ করতে আগ্রহীদের মিনার উদ্দেশে যাত্রা করার মাধ্যমে শুরু হয়েছে ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজের এই আনুষ্ঠানিকতা। সামর্থ্য রয়েছে এমন নারী বা পুরষের জীবনে একবার হজ পালন অবশ্যকরণীয়।
বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা মনিটরিং দলের দলনেতা ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ও ধর্মসচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিকও মিনায় অবস্থান করছেন বলে বুধবার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিনার বিস্তীর্ণ প্রান্তর এখন মুখরিত 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' ধ্বনিতে। হাজীদের পরিধেয় সেলাইবিহীন শুভ্র দু’টুকরো কাপড়। বিত্ত-বৈভব, কামনা-বাসনাকে পরিত্যাগ করে হাজীরা আল্লাহর সান্নিধ্য ও ক্ষমাপ্রত্যাশী।
মিনা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে সূর্য ওঠার আগে আরাফাতের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন হাজীরা এবং পৌঁছাতে হবে যোহরের আগে।
এবার বাংলাদেশ থেকে ৮৬ হাজার ৯৫৮ জন হজ করতে সৌদি আরব গেছেন। অন্যান্য দেশ থেকে গেছেন প্রায় ১৪ লাখ ৭০ হাজার। এরসঙ্গে স্থানীয় হজযাত্রী মিলে এ সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিকতার শুরু থেকে কোরবানি
আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত থাকাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। দুপুর (যোহর) এর থেকে বিকালের (আসর) নামাজ সংক্ষিপ্ত আকারে একই সঙ্গে পড়েন হাজিরা। সেখানে আরাফাতের ময়দানের একপ্রান্তে মসজিদে নামিরাতে হজের খুতবা দেন একজন ইমাম।
পরদিন কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা উদ্যাপন হবে।
৯ জিলহজ (বৃহস্পতিবার) যোহরের আগে থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত পুরো সময় আরাফাত ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। এরপর হাজীরা মাগরিবের নামাজ না পড়েই মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।
মুজদালিফায় পৌঁছে হাজিরা মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন এবং মুজদালিফায় রাত্রিযাপন করবেন, থাকবেন খোলা আকাশের নিচে।
সেখানে সারারাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে ফজরের নামাজ পড়ে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন হাজিরা। মুখে থাকে তাকবির 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক'…
শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করতে হয় মুজদালিফায় অবস্থানের সময়, রাতে কিংবা সকালে।
হজের তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ সকালে মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে তিনবার জামরাতে সাতটি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হয়।
বড় জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনায় কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যারা সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় কোরবানি সম্পন্ন করেন, তারা এসএমএসর মাধ্যমে কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার বার্তা পান।
এরপর চুল কেটে ফেলতে পারেন এবং সাধারণ কাপড় পরে যেতে পারেন কাবাঘর প্রদক্ষিণ করতে। মহানবী (সা.) জোহরের নামাজ পড়েছিলেন মসজিদে হারামে। কাবাঘর প্রদক্ষিণ শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়ে তারা চলে যান সাফা-মারওয়া মধ্যে সাতবার ছুটোছুটি করতে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে জমজমের পানি পান করতে বলা হয়।
১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে প্রতিদিন।
তবে যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের আগে কিংবা পরে কাবা শরিফ গিয়ে তাওয়াফ করেন, তাহলে তাকে তাওয়াফের পর আবার মিনায় চলে আসতে হবে এবং রাতে মিনায় অবস্থান করতে হবে।
নারী, বৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে দুর্বলরা কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে রাতের সময় বেছে নিলে ভালো।
কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে এখন হজ কর্তৃপক্ষ সময়সূচি ঠিক করে দেয় এবং বাংলায় দিক নির্দেশনার ব্যবস্থা আছে। সেই সময় অনুযায়ী কঙ্কর নিক্ষেপ করা হলে ভিড় এড়ানো সম্ভব।
১০ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনায় রাত্রযাপন করতে হয়। কেউ মিনাত্যাগ করতে চাইলে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগেই চলে যেতে হবে।
এ সময়ের মধ্যে মিনাত্যাগ করতে না পারলে ১৩ জিলহজ মিনায় অবস্থান করতে হবে। সেদিন সাতটি করে আরও ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে।
মক্কা ছেড়ে দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করতে হয়, যাকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে হিসেবে আদায় হয়ে যায়।
ফিরতি ফ্লাইট শুরু ১০ জুন
এবার বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে হজযাত্রীরা সৌদিতে পৌঁছেছেন।
এ বছর হজের প্রাক ফ্লাইট শুরু হয়েছিল ২৯ এপ্রিল; ১ জুন প্রাক ফ্লাইট শেষ হয়।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৭০টি লিড এজেন্সি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পরিচালনা করছে।
হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ১০ জুন; আর শেষ হবে ১০ জুলাই।
এদিকে হজে গিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ১৭ জন হজযাত্রীর মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সবশেষ গত বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বাসিন্দা মো. খলিলুর রহমান (৭০) মক্কায় অবস্থানকালে মারা গেছেন। তিনি বেসরকারি ব্যবস্থাপনার যাওয়া হজযাত্রী ছিলেন।
মৃত হজযাত্রীদের ১৬ জন পুরুষ ও একজন নারী। এর মধ্যে মক্কায় ১০ জন এবং মদিনায় সাত জন মারা গেছেন।