Published : 30 Apr 2023, 07:54 PM
আচরণবিধি না মানায় প্রার্থিতা বাতিল বা আইনানুগ ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে ৭ মে নির্বাচন কমিশনে ডাকা হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
রোববার কমিশন সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পর বিকালে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক আশাদুল হক।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এ মেয়র প্রার্থী বলেন, “আমি এখনও চিঠি হাতে পাইনি। চিঠি পাওয়ার পর কী বিষয়, তা নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেব। তবে আমি সব সময় আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সচেষ্ট এবং আচরণবিধি মেনেই চলছি। ইসির কাজেও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”
আজমত উল্লার কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে- “সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন জমার প্রাক্কালে সভা, মিছিল, শোভাযাত্রা ও শোডাউন করার ফলে আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে কেন আপনার প্রার্থিতা বাতিল বা আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন কমিশনে (নির্বাচন ভবন, কক্ষ নম্বর ৩১৪) ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ৭ মে বিকাল ৩টায় ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে।”
চিঠিতে বলা হয়, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সচিত্র প্রতিবেদনে এ প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি ইসির গোচরীভূত হয়েছে। এ বিধান লঙ্ঘনের জন্য দণ্ড, জরিমানা ও প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি দলীয়ভাবে সহযোগিতা চেয়ে আচরণবিধি অনুসরণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পার্টি মহাসচিবকে আলাদা চিঠিতে দেওয়া হয়েছে বলেও ইসির সহকারী পরিচালক আশাদুল হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এ নির্বাচনে আচরণ বিধি নিয়ে ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে ইসি।
এদিন সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বসে কারণ দর্শাও নোটিস ও ইসির নির্দশনাসহ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
নৌকার প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর সিটি নির্বাচনী এলাকায় তফসিল ঘোষণার পর ভ্রমণসূচি জারি করে। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার তাদের একান্ত সচিবকে অবগত করার পরও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
এমন পরিস্থিতিতে দল ও সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেকে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নামা, কর্মসূচিসহ ভোটের কাজে মানা করেছে ইসি।
কমিশনের পক্ষ থেকে সরকরি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকায় দলীয় কার্যক্রমে আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এছাড়া সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আচরণবিধি অনুসরণের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকেও আলাদাভাবে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোট হবে ২৫ মে। এরপর ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটিতে এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট হবে।
গাজীপুরে বৈধ প্রার্থী ৯ জন
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জমা পড়া ১২ মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর নয় জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এ নির্বাচনে অংশ নিতে ১৩ জন মনোনয়নপত্র তুললেও দাখিলের শেষ দিন ২৭ এপ্রিল ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন, জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহমেদ, ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, গণ ফ্রন্টের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হারুন অর রশিদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল এবং বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়দা আক্তারের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৮ মে পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সুযোগ আছে, প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে। আগামী ২৫ মে ভোট হবে এই সিটি করপোরেশনে।
আরও পড়ুন
আচরণবিধি লঙ্ঘন: আজমত উল্লাকে তলব করছে ইসি
গাজীপুর সিটি নির্বাচন: জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল, মায়েরটি বৈধ
মনোনয়নপত্র জমায় ‘নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন’ আজমত উল্লার
এমপিদের আটকাতে স্পিকারের শরণাপন্ন সিইসি
গাজীপুর সিটি নির্বাচন: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীকে সতর্ক করে ইসির চিঠি
ইসির অনুমতি ছাড়া বদলি-ছুটি নয়
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত ভোটের কাজে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বদলি না করতে এবং ছুটি না দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নির্দেশনা দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচনী কাজে সহায়তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ ও স্থানীয় সরকার বিভাগে এ ধরনের চিঠিপত্র রুটিন মেনে দেওয়া হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আগের মতো এবারও কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আশা করছে কমিশন।
ইসির অনুমতি ছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের বদলি নয়
চিঠিতে বলা হয়েছে, ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি না পাওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ইসির অধীন প্রেষণে চাকরিরত আছেন বলে গণ্য হবেন।
সাংবাদিক নীতিমালা সংশোধনে স্মারকলিপি
ভোটের দিন সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতিসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।
জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ সংক্রান্ত
নীতিমালা সংশোধনের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে এসব দাবি জানানো হয়।
সাংবাদিক নীতিমালা ‘প্রয়োজনে’ সংশোধনের আশ্বাস সিইসির
রোববার সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দাবির মধ্যে আরও রয়েছে- ভোটকক্ষ (গোপন ভোট কক্ষ নয়) থেকে সরাসরি সম্প্রচারে ইসির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে, কার্ডধারী সাংবাদিকদের কোনো ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে কারও কোনো অনুমতির প্রয়োজন লাগবে না, সাংবাদিক কার্ড যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে।
গত ১২ এপ্রিল ভোটে সংবাদ সংগ্রহে ‘সাংবাদিক নীতিমালা’ জারি করে কমিশন। পরদিন সাংবাদিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করলে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রয়োজনে সংশোধনের আশ্বাস দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এ বছরের শেষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে ২৫ মে থেকে পাঁচ সিটিতে নির্বাচন শুরু হবে। এসব নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।