Published : 24 Jun 2025, 08:09 PM
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে এখনই বাংলাদেশে জ্বালানির দাম বাড়ানোর ‘প্রয়োজন’ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তেলের সরবাহে কোনো ‘সংকট নেই’। আর খোলা বাজারে এলএনজি দাম বাড়ছে কিনা সেদিকেও তারা নজর রাখছেন।
লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন উপদষ্টা।
অনুষ্ঠানে লাফার্জহোলসিম সিমেন্টের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদী গ্যাস সরবরাহ চুক্তি করা হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্য অনুাযায়ী-গ্যাস পাবে লাফার্জ হোলসিম। এতদিন তাদের গ্যাসের দাম ছিল চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত।
নতুন চুক্তি অনুযায়ী, বিইআরসি ঘোষিত নতুন দর ৪০ টাকা (শিল্প) এবং ৪২ টাকা (ক্যাপটিভ) ঘনমিটার হিসাবে গ্যাস পাবে লাফার্জহোলসিম।
সাংবাদিকরা মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের বিষয়টি সামনে এনে দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “যুদ্ধের মধ্যে একটি তেলের জাহাজ বন্দরে এসেছে, পর্যাপ্ত মজুদ হাতে রয়েছে। আমাদের সুবিধা হচ্ছে সরবরাহকারীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসেন।
“উৎস মধ্যপ্রাচ্য হলেও অনেক সরবরাহকারী রয়েছেন, যারা সিঙ্গাপুর থেকে, কেউ মালয়েশিয়ার বাজার থেকে সরবরাহ করেন। সে কারণে তেলের সরবরাহ নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। তবুও আমরা যুদ্ধের ওপর নজর রাখছি।”
তিনি বলেন, “এলএনজির জন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি আছে। তেলের চুক্তিগুলো করা আছে ছয় মাসব্যাপী। আর খোলা বাজারে এলএনজির দাম বাড়বে কিনা সেটা আমরা নজর রাখছি, আপাতত দেশে জ্বালানির দাম বাড়াতে হবে না বলে আমরা মনে করছি।”
দেশে সব সময় ৪৫ দিনের জ্বালানি তেলের মজুদ থাকে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি সচিব সাইফুল ইসলাম।
লাফার্জহোলসিমের সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এটা শুধু একটি গ্যাস সরবরাহ চুক্তি না। বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো জায়গা সেটিও বিশ্বের কাছে বার্তা দেওয়া।
“এখানে একটি সুবিধা রয়েছে, অন্য সব কোম্পানি ঢাকায়, যেখানে আমাদের গ্যাসের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। আর লাফার্জের অবস্থান হচ্ছে সিলেট অঞ্চলে।”
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “আমরা নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি পুরাতন বিনিয়োগকে ধরে রাখতে কাজ করছি। লাফার্জ হচ্ছে গ্লোবাল লিডার, তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
“এই চুক্তির মাধ্যমে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া। যারা এখানে বিনিয়োগ করতে আসবে তারা হয়তো তাদের কাছে জানার চেষ্টা করবে। তাদের কাছে যেন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা পায়। তাদের ফিডব্যাক থেকে অনেকেই আগ্রহী হবেন বলে মনে করি।”
ঢাকায় ইউরোপী ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, “আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কাজ করছি। এখানে অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
“সম্প্রতি বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রকাশ করেছে। সেখানে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে খুবই আশাব্যঞ্জক। আমরা এই লক্ষ্যমাত্রা পুরণে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।”
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইকবাল চৌধুরী বলেন, “লাফার্জহোলসিম শুধু সিমেন্ট ও ক্লিংকার তৈরি করে না, এখানে স্কিল জনশক্তি তৈরি করছি। যাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। যারা বিশ্বের অনেক দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।”
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।