Published : 27 May 2025, 07:35 PM
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর— আইএসপিআর।
মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য দেয় আইএসপিআর।
আইএসপিআর সংবাদ সম্মেলন করার আগেই অবশ্য সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসে।
খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার ভোরে কুষ্টিয়ার একটি বহুতল ভবন থেকে সুব্রত বাইনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সুব্রত বাইনের সঙ্গে গ্রেপ্তার আরেকজন কে, সেটা তখন জানা যায়নি।
ওই খবরের বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “শোনা যাচ্ছে, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা আমাদের অফিসিয়ালি কেউ জানায়নি।”
এর মধ্যে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একটি ইউনিট দুজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের দুজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা সক্ষম হয়েছে।"
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- সুব্রত বাইন, আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, শ্যুটার আরাফাত ও শরীফ।
তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আজ আনুমানিক ভোর ৫ টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“পরবর্তী সময়ে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইনের দুই সহযোগী শ্যুটার আরাফাত ও শরীফকে।”
আইএসপিআর বলছে, এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
“সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ‘২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ অন্যতম।”
অভিযানে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করার কথাও বলেছে আইএসপিআর।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার সন্ত্রাস জীবনের উত্থান শুরু হয়।
২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে, তাদের মধ্যে ঢাকার অপরাধ জগতের তখনকার প্রভাবশালী ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের প্রধান সুব্রত বাইনও ছিলেন।
২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত।
এরপর ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করেন সুব্রত বাইন।
একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলী নাম নিয়ে ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন তিনি।