Published : 02 Jun 2025, 05:35 PM
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার পর আলোচনার উদ্বোধন করেন কমিশনের সভাপতি, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজসহ অন্য সদস্যরাও উপস্থিত রয়েছেন।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে অংশ নিয়েছেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এবং হামিদুর রহমান আযাদ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।
এছাড়া এলডিপির চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিসের আহমদ আব্দুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, সিপিবির সাজেদুল হক রুবেল, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, এবি পার্টির আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এবং নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ারসহ অন্যরা অংশ নিয়েছেন।
সংলাপে দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দল ও দুটি জোটের নেতারা অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৬টি দল ও দুটি জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও পরে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ এবং ইসলামী ঐক্যজোটকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।
কমিশনের প্রথম দফার আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০ মার্চ এবং তা শেষ হয় ১৯ মে।
গণআন্দোলনে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলো ২০২৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করে।
পরে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে সরকার।
বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এ ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি গত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। এরপর ৫ মার্চ পাঁচটি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।
স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। পরে মোট ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়। কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়।
মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আগে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।