Published : 20 Jun 2025, 03:24 PM
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পূর্ববর্তীদের মত অন্তর্বর্তী সরকারও কোনো 'সদিচ্ছা' দেখায়নি বলে অভিযোগ করেছেন লেখক ও আদিবাসী অধিকারকর্মী সতেজ চাকমা।
বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জীবন ‘বিপন্ন অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে’ বলে মনে করেন তিনি।
শুক্রবার ধানমন্ডির উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) মিলনায়তনে 'সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে করণীয়' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।
ওই সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সতেজ চাকমা।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'বৈষম্যহীনতা ও অন্তর্ভুক্তি'র কথা বলে যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, সে সরকারের সংস্কার কার্যক্রমেও আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তি সন্তোষজনক নয়।"
তিনি বলেন, "সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংবিধান সংস্কার কমিশনে আদিবাসী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্বই নেই। অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশন এখনও পর্যন্ত আদিবাসীদের কার্যকর কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতৃত্বের সাথে কোনো সংলাপ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। ফলে আগামীর সংস্কার কার্যক্রমে এবং রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক।"
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে কয়েকটি করণীয় নির্ধারণের ব্যাপারেও বক্তব্য তুলে ধরেন সতেজ চাকমা।
এর মধ্যে রয়েছে-
অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বপ্নভঙ্গ হওয়া তারুণ্যের দ্রোহী প্রতিরোধই এ অঞ্চলের সমস্যার সমাধানে অনিবার্য হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেন সতেজ চাকমা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারের দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সবাই নতুন বাংলাদেশ এবং বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমি এখনো আশাবাদী, তারা বৈষম্যবিরোধী এবং আদিবাসীদের জন্য কিছু করবে।"
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের অনেকগুলো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাফল্য অর্জন করেছে, তা নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু নিজের দেশে তারা কেন পারছে না? এই প্রশ্নটা করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে।"
আদিবাসীদের উদ্দেশ্যে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "আমাদের দেশে অধিকার কেউ হাতে তুলে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। আমরা বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ চাইব, অথচ আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়া হবে না, তা তো হয় না।"
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ শ্রী ঊষাতন তালুকদার বলেন, "আমরা এখানে যে দাবি নিয়ে কথা বলছি, তা সরকারের দায়িত্বশীলদের কানে কতটা যাবে, তা নিয়ে আমি সন্দিহান। আর কানে গেলেও তারা সেটি কতটা গুরত্ব দেবেন, তা নিয়েও সন্দিহান।"
পাহাড়ের মানুষ অনেক আশা নিয়ে শান্তি চুক্তি করেছিল, তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে আক্ষেপও ঊষাতন তালুকদার।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, "৩৩ বছর আগে আমি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, তখনও আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে যে দাবি করেছি। আজকে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও একই দাবি নিয়েই কথা বলছি। তাহলে আমরা কোথায় এগিয়েছি? যাদের হাতে এ দাবি বাস্তবায়নের দায়িত্ব, তাদের মধ্যে এই দাবির ন্যায্যতা বোঝানোর বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।"
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, "রাষ্ট্র যখন দানবের মত আচরণ করে, তখন সাধারণ মানুষের জায়গা থাকে না। রাষ্ট্র সভ্য কি না, তা বোঝা যায়- যখন রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ ভালো থাকে। মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, লুটেরা শ্রেণির ভালো থাকা দিয়ে রাষ্ট্রকে সভ্য বলা যায় না।"
সভায় আরও বক্তব্য দেন এএলারডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরামেত সহসভাপতি অজয় এ মৃ। সঞ্চালনা করেন হিরণ মিত্র চাকমা।