Published : 21 Oct 2024, 08:41 PM
সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীরের দেশত্যাগে নিষেদাঝ্হা দিয়েছে আদালত।
এছাড়া মন্নুজানের সঙ্গে তার ভাই-ভাতিজি, সাবেক সংসদ মো. সাদেক খান, তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান, সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান, স্ত্রী আফরোজ সুলতানার দেশত্যাগেও নিষেদাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সোমবার।
এনবিআরের আলোচিত সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তানের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
সবগুলো আদেশই এসেছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত থেকে।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, তার ভাই শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও ভাতিজি শামীমা সুলতানা হৃদয়ের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।
আবেদনটি করেন দুদকের পরিচালক আব্দুল মাজেদ। আবেদনের ওপর শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী মীর মোহাম্মদ আলী সালাম।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার এমপিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।
“অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠজন দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়ন করতে পারেন মর্মে অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।”
দুদকের আরেক আবেদনে একই বিচারক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালত বরাবর আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আদালতে এ বিষয়ে শুনানি করেন।
আবেদনে বলা হয়, মহীউদ্দিন খান আলমগীরের সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) জামালপুরের বকশীগঞ্জ শাখা থেকে ৮ কোটি ৮৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে গোপনে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানের স্বার্থে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী খান এবং সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান ও স্ত্রী আফরোজ সুলতানার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আলাদাভাবে আবেদন করা হয়।
দুদকের উপপরিচালক ওমর ফারুক ও উপপরিচালক রেজাউল করিম এই দুটি আবেদন করেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শুনানি করেন।
সাদেক খানের আবেদনে বলা হয়েছে, সাদেক খানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ভূমি দস্যুতাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকরি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি দল টিম গঠন করা হয়েছে।
সাদেক খান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন ৪৭ নম্বর (বর্তমানে ৩৪ নম্বর) ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর। এসব দায়িত্বে থেকে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে জানা যায়।
“অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার স্ত্রীসহ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তাদের বিদেশ গমন রহিত করা একান্ত প্রয়োজন।”
একই কারণ দেখিয়ে আনোয়ারুল আশরাফ খানের বিষয়ে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে আত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি তিন সদস্যের দল অনুসন্ধানাধীন করছে।
তার বিরুদ্ধে অবৈধ আয়ে নিজ এলাকায় আনুমানিক ৫১ লাখ টাকার কৃষি জমি, প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট, ভাটারা থানার জোয়ারসাহারা মৌজায় প্রায় ৪৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট এবং রাজউক এর উত্তরা ৩য় প্রকল্পের প্রায় ৩২ লাখ টাকার প্লট এবং স্ত্রী আফরোজা সুলতানার নামে বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক কোটি টাকার প্লট, ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নতুন করে আবেদন করেন দুদকের উপ-পরিচালক আনোয়ার হোসেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কামিজ ও ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্নব কর্তৃক দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
“সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমন রহিত করার জন্য পুনরায় আদেশ প্রদান করা আবশ্যক,” বলা হয়েছে আবেদনে।
এর আগে গত ২৪ জুন দুদকের আবেদনে আদালত মতিউর রহমান, স্ত্রী লায়লা কানিজ ও পুত্র আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আদালত।