Published : 27 Nov 2024, 04:44 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন হত্যা মামলায় সাবেক এমপি-মন্ত্রীসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
বুধবার পৃথক রিমান্ড আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম বেলাল হোসেন।
রিমান্ডে যাওয়ারা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিম, সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজ ও লালবাগ জোনের ডিবির সাবেক ডিসি মশিউর রহমান।
আনিসুলের ৩ দিনের রিমান্ড
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে জান্নাতুল ফেরদৌস (৪০) হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এদিন তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এসময় তার আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিলের পাশাপাশি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে শনির আখড়ায় গুলিতে নিহত হন জান্নাতুল ফেরদৌস। এ ঘটনায় ১৩ সেপ্টেম্বর জান্নাতুল ফেরদৌসের ভাই মামুনুর রশীদ যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন।
কামরুল ইসলাম ৪ দিনের রিমান্ডে
আজিমপুরে শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে ৪ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এদিন কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসময় তার আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিল চাওয়ার পাশাপাশি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে আদেশ দেন।
এজাহার অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ জুলাই আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় তার বাবা কামরুল হাসান বাদী হয়ে ১৯ অগাস্ট লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫২ জনকে আসামি করা হয়।
দুই মামলায় সোলায়মান সেলিমের ৭ দিনের রিমান্ড
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাকিব ও খালেদ নামের পৃথক হত্যা মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান সেলিমকে ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে লালবাগ থানার খালেদ হত্যা মামলায় ৪ দিন এবং চকবাজার থানার রাকিব হত্যা মামলায় তাকে ৩ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
এদিন কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করে দুই মামলায় ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এরপর তার আইনজীবী প্রাণ নাথ বিশ্বাস তার রিমান্ড আবেদন বাতিল এবং জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
রাকিব হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট সকালে চাঁনখারপুল মোড়ে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ এবং এলোপাতাড়ি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে রাকিব হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হন।
গুরুতর আহত রাকিবকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে হামলাকারীরা বাধা দেয়। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে চকবাজার মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আর খালেদ হত্যা মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৮ জুলাই আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
আ স ম ফিরোজ ২ দিনের এবং সাবেক ডিসি মশিউর ৩ দিনের রিমান্ডে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী থানার সাইদুর রহমান ইমরান হত্যা মামলায় সাবেক হুইপ আ স ম ফিরোজকে দুই দিনের এবং ডিবির কোতোয়ালী জোনের সাবেক ডিসি মশিউর রহমানকে ৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
এদিন তাদেরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে ৭ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসময় তাদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, গত ৫ অগাস্ট যাত্রাবাড়ীর হানিফ উড়ালসড়কের কুতুবখালী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন সাইদুর রহমান ইমরান। একপর্যায়ে আন্দোলনে গুলি চালান আওয়ামী লীগ নেতা হারুনুর রশীদ মুন্নাসহ অন্য আসামিরা।
তখন সাইদুর গলায় গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ২৮ অক্টোবর নিহতের মা লাভলী বেগম বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
প্রভাবশালী ১৮ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার
আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ১৮ জনকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই আদালত শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার দেখানোদের মধ্যে আছেন-আমির হোসেন আমু, সালমান এফ রহমান, আ স ম ফিরোজ, দীপু মনি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক মনিরুল ইসলাম, লালবাগ জোনের ডিবির সাবেক ডিসি মশিউর রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, সাদেক খান, এ বি এম ফজলে করিম, জুনাইদ আহমেদ পলক, সোলায়মান সেলিম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান।