Published : 25 Nov 2024, 09:56 PM
ঢাকায় কয়েকটি কলেজে হামলার ঘটনায় পুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া কথা বলেছেন।
নাহিদ বলেছেন, “পুলিশ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারত”, আসিফের বক্তব্যও ছিল প্রায় একই ধরনের। তিনি বলেছেন, “পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায়নি।”
গত দুই দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থীদের হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই উপদেষ্টা।
গত দুই দিন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের দুর্বলতা ছিল। সেটা আমরা স্বীকার করছি।
“পুলিশ একটা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারত। সে কারণে পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে ঠিকই, কিন্তু সংঘর্ষে জড়ায়নি। পুলিশের দিক থেকে দুর্বলতা থাকলে সেটাও আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”
প্রবল গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার সাড়ে তিন মাসেও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। একের পর এক শ্রমিক অসন্তোষের কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হওয়ায় অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার কথা বলেছেন খোদ পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
আরও পড়ুন: বিশৃঙ্খলা: 'অর্থনৈতিক মন্দার' শঙ্কায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা
আরও পড়ুন: অনেক মিত্র সরকারে শরিকানা না পেয়ে 'উন্মত্ত': মাহফুজ
এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির রেশ কাটতে না কাটতেই রোববার পুরান ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা করে লুটপাট চালায় ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সেই কলেজে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছিল। আর এর প্রতিক্রিয়ায় ঘোষণা দিয়ে পরদিন ডেমরার কলেজটিতে পাল্টা হামলা চালায় সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তেজগাঁওয়ে রোববার গভীর রাতে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি- বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও সংঘাত হয়েছে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘাতের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এলজিআরডি এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা বাধা ডিঙিয়ে চলে যায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায়নি।”
ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
‘অস্থিরতা সৃষ্টিতে পরিকল্পিত চেষ্টা’
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে নানা ঘটনা ঘটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলেন, “বড় কোনো পরিকল্পনা না থাকলে একদিনে এতগুলো ঘটনা ঘটত না। নানা পক্ষের পরিকল্পনা এখানে আছে বলে আমরা মনে করি।”
সরকার সফলভাবে কাজ পরিচালনা করুক এটা অনেকেই চাচ্ছে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিগত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ বাহিনীতে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে একটা বড় পরিবর্তন আমরা করছি। সেই জিনিসগুলো নস্যাৎ করতে, আমাদেরকে এসবের মধ্যে অনেক বেশি ব্যস্ত রাখতে এবং সারাদেশের অ্যাটেনশন এই দিকে নিয়ে আসতে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে কিনা সন্দেহ করছি।
বিশৃঙ্খলা: 'অর্থনৈতিক মন্দার' শঙ্কায় পরিকল্পনা উপদেষ্টা
'মেগা মানডে': সংঘাতে রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ, আহত শতাধিক
“অহিংস গণআন্দোলন নামের একটি সংগঠন ঢাকায় বাসে করে কিছু মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে ঋণ দেওয়ার নাম করে। মিথ্যা প্রচারণা করে তারা মানুষকে নিয়ে এসেছে।”
এসব ঘটনায় দেশ ও দেশের বাইরে কারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেটা তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “অস্থিরতা ঠেকাতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হবে।”
‘গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হতে হবে’
তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়কে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরে যা যা ঘটছে সে প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান উঠে আসে।
পত্রিকা দুটিকে ‘ভারতপন্থি’ আখ্যা দিয়ে গত কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছে একদল লোক। এর ধারাবাহিকতায় তারা রোববার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে ‘জিয়াফত’ কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়।
দলে দলে এসে ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী কলেজে তাণ্ডব
ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
কর্মসূচি পালনের কথা বলে রোববার বিকালে দুটো গরু নিয়ে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ের আসেন একদল লোক। তাদের পুলিশ বাধা দেয়।
পরে তারা প্রথম আলো কার্যালয় প্রগতি ভবনের সামনে থেকে সরে এক পাশে এসে গরু জবাই করে। পুলিশ তাদের কয়েক দফায় সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সন্ধ্যায় সেখান থেকে সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজ শোনা যায়।
সোমবার রাজশাহীতে প্রথম আলো কার্যালয়ের সাইনবোর্ড খুলে নেয় একদল মানুষ। আগের রাতে পত্রিকাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “কোনো গণমাধ্যম বা পত্রিকা নিয়ে গণমানুষের কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটা প্রকাশ করতে পারে; সেটা অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে। কিন্তু ভাঙচুর করা কিংবা চাপ প্রয়োগ করা আমরা কোনো অবস্থাতেই সমর্থন করি না।
“এই ধরনের ঘটনা পরবর্তীতে ঘটলে সহ্য করা হবে না। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম ও উপ প্রেস সেক্রেটারি অপূর্ব জাহাঙ্গীরও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃ্ষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আটকের প্রশ্নে শফিকুল বলেন, “তার বিষয়ে ডিএমপি বিস্তারিত বলবে। যতটুকু জানি উনি আটক হয়েছেন এবং উনার নামে কোতয়ালি থানায় একটা মামলা রয়েছে।“