Published : 01 Jul 2025, 01:12 AM
“অধ্যাপক ইউনূসকে বুঝতে হলে গ্রামীণ ব্যাংককে বুঝতে হবে; আবার গ্রামীণ ব্যাংককে বুঝতে হলে ড. ইউনূসকে বুঝতে হবে” বলে মন্তব্য করেন লেখক এলেক্স কাউন্টস।
তিনি বলেন, "মানুষের জীবনমান উন্নত করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের প্রকল্প। ড. ইউনূসের মতো পাবলিক ফিগার ও গ্রামীণের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা থাকবে। কিন্তু সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া উচিত।"
দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) প্রকাশ করেছে এই লেখকের 'ক্ষুদ্র ঋণ, বড় স্বপ্ন: মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক এবং বৈশ্বিক ক্ষুদ্রঋণ বিপ্লব' বইটি।
সোমবার ইউপিএলের প্রধান কার্যালয়ে বইটির প্রকাশনা উৎসবে বলা হয়, বইটি ড. ইউনূসের জীবনীর একটি অংশ।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম ও শিকাগোর শহরতলীর কয়েকজন নারীর জীবনের উপাখ্যান বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে, যারা ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন বলেই নিজেদের উদ্যোগে ছোট ব্যবসা গড়ে তুলে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন।
গ্রামীণ আমেরিকার সাফল্যের হাত ধরে কীভাবে গ্রামীণ পদ্ধতি আমেরিকায় বিস্তৃত হল, সে বর্ণনা লেখক তুলে এনেছেন।
এলেক্স কাউন্টস বলেন, "স্কুলে পড়ার সময় আমি গান্ধীকে দেখি। তখন থেকে আমি একজন বড় মহান আদর্শের ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমি অধ্যাপ ইউনূসকে চিঠি লিখেছি। তার সঙ্গে কাজ করতে চাই বলেছি। ড. ইউনূস আমাকে উত্তর দিলেন; আমাকে আসতে বললেন। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে আমি বাংলাদেশে আসি। বইটা আমি মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের শাখার উপর কাজ করে লিখেছি।"
"নারীরা এ বইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা নারীদের বিরুদ্ধে, দরিদ্রদের বিরুদ্ধে এবং অশিক্ষিতদের বিরুদ্ধে। তিনি এর পাল্টা ব্যবস্থা করতে চেয়েছেন। আরও একটা কারণ, নারীরা ছিল ভালো গ্রহীতা, তাদের দ্বারা ঋণ পরিশোধের হার বেশি।"
ইউপিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্রুখ মহিউদ্দীন বলেন, "আমরা সাধারণত বেশি সময় নিয়ে অনুবাদ সম্পাদনা ও বই প্রকাশের কাজটি করি। তবে কাউন্টসের বইটি তুলনামূলক দ্রুত বের করা হয়েছে। কারণ আমরা মনে করি ইউপিএলের ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর বাংলা সংস্করণ বের করা দরকার। এতে বাংলাভাষী পাঠকের জন্য বইটি সহজলভ্য হবে।"
আলোচনায় অংশ নিয়ে পিকেএসএফের প্রাক্তন পর্ষদ সদস্য ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন পারভীন মাহমুদ বলেন, "ক্ষুদ্রঋণ আগের পর্যায়ে নেই। প্রাথমিক অবস্থা থেকে ঋণ কর্মসূচি এখন অনেক বদলেছে।
"পিকেএসএফের কাজের সূত্রে দেখেছি, এর কার্যকারিতা আছে। আমাদের কাজের অভিজ্ঞতা বলছে, অনেক নারী ঋণ নিয়ে ভালোভাবে উন্নতি করেছেন। যদিও এর সমালোচনা আছে যে, এটি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নিয়ে নেন। তবে সেগুলো পরিবারের স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়।"
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের বলেন, "ক্ষুদ্র ঋণের কয়েকটা পরিপ্রেক্ষিত আছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে দেখেছি, মেয়েরা ভালো ঋণ গ্রহীতা। তারা পরিবারের জন্য তুলনামূলক ভালো অর্থ ব্যবস্থাপনাকারী।"
গ্রামীণ ব্যাংক, বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরদার আকতার হামিদ বলেন, "গ্রামীণ ব্যাংক একজন ঋণ গ্রহীতাকে সঞ্চয় করার বিষয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছে। এখানে লক্ষাধিক লোক কাজ করছে। এতো বেশি মানুষ যেখানে কাজ করে সেখানে অল্প কিছু সমালোচনার কথাও শোনা যেতে পারে। ড. ইউনূস গ্রামীণের সমালোচনাগুলোকে একেবারে ফেলে দেননি।"
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উন্নয়নবিষয়ক গবেষক এবং ইনোভিশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রুবাইয়াৎ সারোয়ার।