Published : 07 Jun 2024, 12:40 AM
বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে দুজন ‘সুষম খাদ্যের সংকটে’ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ।
আর এ বয়সী পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন সুষম খাদ্যের ‘তীব্র সংকটের’ মধ্যে আছে, যারা দিনে মাত্র এক বা দুই ধরনের খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে।
বৃহস্পতিবার ‘শৈশবকালীন খাদ্য সংকট: প্রারম্ভিক শৈশবে পুষ্টি বঞ্চনা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। সেখানেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।
সেখানে বলা হয়, পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য ন্যূনতম যে পাঁচ ধরনের খাদ্য গ্রহণের সুপারিশ ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করে, বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শিশু তা থেকে বঞ্চিত।
ইউনিসেফ বলছে, শৈশবকালীন পর্যাপ্ত সুষম খাবারের ঘাটতি শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর বিশেষ প্রভাব দেখা যায় শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে। আর এর পরিণাম সারাজীবনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। শৈশবে ভালো পুষ্টি থেকে বঞ্চিত শিশুরা সাধারণত স্কুলে কম ভালো করে, কর্মজীবনে কম উপার্জন করে এবং দারিদ্র্য ও বঞ্চনার চক্রে আটকে থাকে।
যেসব শিশু নিয়মিত ওই পাঁচ ধরনের খাবার খেতে পারে না, তাদের অপুষ্টির একটি মারাত্মক ধরন - উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হবার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেশি থাকে।
বিশ্বব্যাপী সুষম খাদ্য সংকটের শিকার শিশুদের মোট সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের (৬৫ শতাংশ) বাস যে ২০টি দেশে, বাংলাদেশ তার একটি।
ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ভালো পুষ্টি শিশুদের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি ও বিকাশের ভিত্তি। শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তাদের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়।
“এ বিষয়ে পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যার আওতায় পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সেবাগুলোকে আরও উন্নত ও সহজলভ্য করতে হবে; সাথে আরও প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শৈশবকালীন সুষম খাদ্যের সংকট বাড়ার পেছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– পুষ্টিকর খাদ্য কেনায় পরিবারের অক্ষমতা, শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো সম্পর্কে বাবা-মায়ের সচেতনতার অভাব, অপুষ্টিকর অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি মিশ্রিত কোমল পানীয়ের ব্যাপক বিপণন ও এসব খাবার খাওয়ার বদভ্যাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন জনিত দুর্যোগের ব্যাপকতা বাড়া যা খাদ্য ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় সতেজ খাবারের প্রাপ্যতা ও কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং খাদ্যের দাম রেকর্ড-উচ্চতায় নিয়ে যায়।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার, সুশীল সমাজ, দাতা সংস্থা, বেসরকারি খাতের সামনে একগুচ্ছ সুপারিশ রেখেছে ইউনিসেফ।
• শিশুর অপুষ্টি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সেবা প্রদানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে ও আরও উন্নত করতে হবে।
• কমিউনিটির স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মীদের সক্ষমতা তৈরিতে বিনিয়োগ করতে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত ও অনুন্নত এলাকায় সুপারিশ অনুযায়ী শিশুদের খাওয়ানো ও যত্নের বিষয়ে বাবা-মা এবং যত্নকারীদের সময়োপযোগী ও ভালো মানের পরামর্শ সহায়তা প্রদান করতে হবে।
• শৈশবকালীন সুষম খাদ্য সংকটের কারণগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলার প্রচেষ্টা জোরদারের পাশাপাশি খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় যাতে নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
• অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমল পানীয়ের অনিয়ন্ত্রিত বিপণনসহ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের পরিবেশ থেকে সব শিশুকে রক্ষা করতে হবে।