Published : 05 Nov 2023, 10:34 PM
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যথেষ্ট পরিকল্পনা থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের (জিসিএ) প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক ফারকোয়েন।
তিনি বলছেন, “আমি মনে করি, পরিকল্পনা বাংলাদেশের রয়েছে, আছে সেই এজেন্ডা সামনে এগিয়ে নেওয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্বও। সুতরাং এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করা এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া। আমি মনে করি, সেই যাত্রাই রয়েছে এখন আমাদের সামনে।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু অভিযোজনে কাজ করা নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিসিএ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্যাট্রিক ফারকোয়েন ভাগেনিংগেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের গ্লোবাল ফরেস্ট ডিপ্লোমেসির ভিজিটিং প্রফেসর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আলোচনা অনুষ্ঠান ইনসাইড আউটে যোগ দিয়ে নভেম্বরের শেষে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮), জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশের উদ্যোগ এবং নিজের প্রতিষ্ঠান জিসিএ-র কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ইনসাইড আউটের এই সর্বশেষ পর্বটি সম্প্রচার করা হয়।
প্যাট্রিক ফারকোয়েন মনে করেন, অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম সারিতেই রয়েছে। বাংলাদেশের রয়েছে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা। অর্থাৎ, বিনিয়োগের অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণের ফ্রেমওয়ার্কও বাংলাদেশের রয়েছে।
“দ্বিতীয়ত, জাতীয় প্রকল্পের সঙ্গে জনগণের সম্পদের মেলবন্ধনের বিষয়টি তারা চিহ্নিত করেছে। তৃতীয়ত, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা বাংলাদেশের জাতীয় পরিকল্পনায় অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে এসেছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক।”
জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ প্রকৃতি চিন্তা করে অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, কেবল এখনকার জন্য জলবায়ুর ক্ষতি প্রতিরোধী অবকাঠামো নয়,
বরং ভবিষ্যতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও জলবায়ু ঝুঁকির বিষয় মাথায় রেখে প্রকল্প তৈরি এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।”
আসন্ন কপ-২৮ এ ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বাস্তবায়ন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ এবং অভিযোজনে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসাবে থাকবে বলে মনে করেন ফারকোয়েন।
তিনি প্রশ্ন করেন, ২০১৫ সালের জলবায়ু চুক্তিতে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু সে অনুযায়ী কার্যক্রম কি গ্রহণ করা হয়েছে?
“বাস্তবতা হচ্ছে, তারা লাইন থেকে অনেক দূরে। বিশ্ব যে লাইনচ্যুত, সেটা মেনে নেওয়ার মাধ্যমে কপ-২৮ এ এটা স্পষ্ট করতে হবে যে, (বৈশ্বিক উষ্ণতার বৃদ্ধি প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে) ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্য) যথেষ্ট নয়। সব দেশকে আরও বড় অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হতে হবে, বিশেষ উন্নয়ত দেশগুলোকে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ এজেন্ডার বিষয়ে ফারকোয়েন বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই মুহূর্তে জলবায়ুর কারণে ক্ষতি ও লোকসানের সম্মুখীন।
“বিশেষ করে বাংলাদেশ, আফ্রিকা এবং অন্যান্য দেশ। কাউকে না কাউকে এই লোকসানের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সুতরাং এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়।”
জলবায়ু অভিযোজনের ক্ষেত্রে অর্থায়নও এবারের সম্মেলনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হিসাবে থাকবে জানিয়ে ফারকোয়েন বলেন, “অবশ্যই আমাদেরকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে হবে, একইসঙ্গে আমাদের খাদ্য, অবকাঠামো ব্যবস্থাকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। কিন্তু এর জন্য কাউকে না কাউকে অর্থ খরচ করতে হবে।”
তিনি বলেন, অভিযোজনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি বছর ২০০ কোটি ডলার খরচ করে। কিন্তু এজন্য বাংলাদেশের খরচ করা দরকার ৮০০ কোটি ডলার।
“সুতরাং অভিযোজনে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিশাল ফারাক রয়েছে। দুই বছর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অংক দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন কপ-২৮ এ এসে সেটার বাস্তবায়ন করা দরকার।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গ্লোবাল সাউথের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সম্মেলনে জোরালো আহ্বান জানাবেন বলে মনে করেন ফারকোয়েন।
তেল উৎপাদানকারী দেশ হয়েও আরব আমিরাত জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজন করায় কপ-২৮ থেকে কার্যকর কোনো ফল আসবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবে দেখার চেষ্টা করার কথা বলছেন জিসিএ প্রধান ফারকোয়েন।
তিনি বলেন, কপ আয়োজনকারী দেশ ‘নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী’ হিসাবে সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে আসবে বলে মনে করা হয়। আর তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশকেও তার অংশ হিসাবে রাখতে হবে।
“তেল ও গ্যাস শিল্প যদি নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ না করে, তাহলে কোনোভাবেই বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না।”
তেল-গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আরব আমিরাত যে সামনের কাতারে রয়েছে, সে কথাও বলেন অধ্যাপক ফারকোয়েন।
তিনি বলেন, “নিজেদের শিল্পকে পরিশুদ্ধ করার জন্য হলেও তারা একটি আসন পাওয়ার দাবি রাখে। তেল ও গ্যাস শিল্পকেও জোরালো প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। এটা মিথেন গ্যাসের ক্ষেত্রে হোক কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের বিষয় হোক।”