Published : 14 Jun 2024, 12:05 AM
কোরবানি ঈদে ঢাকার পশুর হাটগুলোতে আনুষ্ঠানিক বিক্রি শুরু হয়ে গেছে, ক্রেতাও আসছেন, ঘুরে ফিরে দেখছেন, কেউ কেউ কিনছেনও; তবে তিন দিন আগেও পুরোপুরি জমে ওঠেনি কেনাবেচা।
বেপারি ও খামারিরা আশা করছেন, শুক্রবার থেকে হয়তো বিক্রি বাড়বে, ঈদের আগে শেষ দুই দিনেই বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হবে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকার শ্যামপুরের পোস্তগোলা শ্মশানঘাট-সংলগ্ন বালু মাঠের পশুর হাট, কমলাপুর, তিব্বত বাসস্ট্যান্ডের পাশে কলোনি বাজার পশুর হাটে ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
পোস্তগোলায় পশুর হাটে দেখা যায়, পশু নিয়ে হাটে আসা লোকজনের মধ্যে কেউ খাওয়ার জন্য নিচ্ছেন রান্নার প্রস্তুতি। পাশেই বুড়িগঙ্গায় দেখা গেল, অনেকে পশুকে গা ধোয়াচ্ছেন। কেউ আবার গরুর খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। ঘুমাতেও দেখা গেল কাউকে কাউকে।
হাটে ক্রেতাদের আনাগোনা আছে, কিছু কেনাবেচাও হচ্ছে; তবে ভিড় বলতে যা, তা এখনও সেভাবে হয়নি।
দাম বেশি?
হাটে আসা ক্রেতারা বলছেন, আগের বছরের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি। অনেকের ধারণা, ঈদের আগের দুই দিনে দাম কমবে; বছর বছর এমনই দেখে আসছেন তারা।
ঢাকার পোস্তগোলার পশুর হাটে কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছেন আশরাফুল আলম। জুরাইনের বাসিন্দা আশরাফুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গরু কিনতে এলাম। দুই বাচ্চাসহ। আসলে দাম নিয়ে কথা বলা হয়ত ঠিক হবে না। যেহেতু ধর্মীয় রীতির ব্যাপার। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে এ বছর দামটা একটু বেশি।
“অন্যবার যে সাইজের এবং ওজনের গরু কিনেছি ১ লাখ টাকায়, এবার সেটা প্রায় দেড়, দুই লাখ টাকা চাচ্ছে।”
আফতাবগর থেকে আসা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমার বাসা আফতাবনগর আবাসিকেই। প্রত্যেকবার তো এখানে হাট বসে। ওখান থেকেই কিনতাম। এবারই এলাম এখানে।
“এখানে দাম একটু বেশিই চাচ্ছে, কেন জানি না। আমার ধারণা, শেষ দু-এক দিনে দাম কমে যাবে। কারণ, যখন দেখবে বিক্রি করতে পারছে না, তখন এমনিই দাম কমবে। এটাই দেখে আসছি।”
তিব্বত এলাকার কলোনিবাজার পশুর হাটে ছাগল কিনতে এসেছেন আব্দুল আহাদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগেরবার একটা খাসি কিনেছিলাম ২৫ হাজার টাকায়। এবার একটু দাম বেশি মনে হচ্ছে। ব্যাটে-বলে মিললে আজ কিনব, না হয় কাল-পরশু আবার আসতে হবে।”
আশায় বিক্রেতারা
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছেন খামারি ও বেপারিরা। তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাট জমেনি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানালেন কেউ-কেউ। তবে শুক্রবার থেকে বিক্রি বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা থেকে পশু নিয়ে বেপারি আব্দুর রাজ্জাক এসেছেন পোস্তগোলা হাটে। গতবারও এসেছিলেন এ হাটে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা গতকাল (বুধবার) এসেছি। মোট ১১ জন মানুষ আর ৩২টা গরু। এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে দুটা। এখনও বাজার পুরোপুরি জমেনি। বিক্রি কম।”
এখন পর্যন্ত বিক্রি কম হওয়ার বিষয়ে তার ভাষ্য, যাদের বাসা-বাড়িতে পশু রাখার মত জায়গা আছে, তারাই আগে আগে পশু কেনেন। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেনাবেচা না জমায় কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে তার।
“কাল-পরশু থেকে হয়তো জমবে। এতগুলো মানুষ, খেয়ে না খেয়ে আছি! হাটে ঘুমানোর কষ্ট। যদি সব বিক্রি না হয়, টেনশন তো হয়ই।”
একই হাটে কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন জয়নাল হোসেন নামে আরেক বিক্রেতা। তিনি বলেন, “বাজার তো জমে নাই এখনও। গরু আনলাম ১২টা, বিক্রি হয়েছে একটা। পাঁচজন আছি আমরা।
কিছু অনিশ্চয়তায় থাকলেও জয়নাল হোসেন আশা নিয়ে বললেন, “ঈদের আগে সবগুলো বিক্রি হবে। পরশু (শনিবার) থেকে মানুষ কিনবে। এখন তো দেখে-শুনে যাচ্ছে।”
পশুর দাম এ বছর বেশি কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিব্বত কলোনি বাজারের পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা কাশিম জমাদ্দার বলেন, “দাম বেশি বলে তো মনে হয় না। আমরা জামালপুর থেকে ট্রেনে গরু নিয়ে আসছি। সারাবছর পালছি। পরিবহন খরচ আছে। ছয়-সাতজন লোকের এই কয়েক দিনের খাওয়ার খরচ, সব তো আসলে বিক্রি করেই তুলতে হবে।”
কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের পশুরহাটে পাবনা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বেপারি আব্দুল বারিক। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২৪টা গরু নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটি বিক্রি হয়েছে।”
কেমন দাম হাঁকাচ্ছেন, প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “খরিদ্দারই আসছে না এখনও। দাম আর কী চাইব!”
অবশ্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “যারা কৌশলে বা নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে দাম হাঁকাচ্ছেন, ওদের মাথায় হাত পড়তে বাধ্য।”
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পশু ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের উদ্দেশে এমন বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “কোরবানির জন্য চাহিদার তুলনায় বাজারে পশু বেশি রয়েছে। আজকে হয়ত কেউ নানাভাবে হ্যান্ডেলিং করে গরুর দাম বাড়াতে পারে। চড়া দাম হাঁকাতে পার। কিন্তু দিন শেষে তাদেরই মাথায় হাত পড়বে। কারণ গরুর যোগান তো আমার আছে।”
ইজারাদাররাও প্রস্তুত
পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসংলগ্ন হাটের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার মইন উদ্দিন চিশতী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের বাজারে বেপারিদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সে জন্য আমরা সার্বিক বিষয়ে খেয়াল রাখছি। বিদ্যুৎ, পানি থেকে শুরু করে সব কিছু ঠিকঠাক আছে।
“এখানে যারা আসেন, তারা প্রান্তিক খামারি। দূর-দুরান্তের এসব মানুষের যাতে কোনো রকম অসুবিধা না হয়, তার জন্য আমরা সর্বাত্মক সচেষ্ট আছি।”
তিনি বলেন, “এখানে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সহায়তা করছে। ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য রোধে আমরা ওয়াচ টাওয়ার বসিয়েছি।
“আমাদের নিজেদের বেশ কিছু লোক এখানে আমরা অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছি। সব মিলে আশা করছি ক্রেতা-বিক্রেতারা নির্বিঘ্নে কেনাবেচা করতে পারবেন।”
ঢাকার যেসব জায়গায় বসেছে পশুরহাট
এবার ঈদে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০টি স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে, যেগুলোতে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে।
স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১১টি হাট বসেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় এ সংখ্যা ৯টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হাটগুলো হল- খিলগাঁও রেলগেইট মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট পাশের খালি জায়গা, বনশ্রীর মেরাদিয়া বাজারের পাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব ও কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজের আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালের পাশের খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউন, রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ডের পাশের খালি জায়গা এবং ডেমরার সারুলিয়ায় সিটি করপোরেশনের স্থায়ী হাট।
ঢাকা উত্তর সিটির মধ্যে সবচেয়ে বড়টি- গাবতলী পশুর হাট। পাশাপাশি আগের মত বসেছে আটটি অস্থায়ী হাট।
অস্থায়ী হাটগুলো বসেছে উত্তরা দিয়াবাড়ীর ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের পাশের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, মস্তুল চেকপোস্ট এলাকা, মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের কাছের খোলা জায়গা, মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে রানাভোলা স্লুইচগেট পর্যন্ত খালি জায়গা ও দক্ষিণখানের জামুন এলাকার খালি জায়গায়।