Published : 13 May 2025, 12:35 PM
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
তিনি বলেছেন, “আমরা সরকারকে বলেছি যে- আপনাদের যে প্রধান কাজ, ওইটার বাইরে গেলে পারা যাবে না। বরঞ্চ সংকটে পড়তে পারেন। কারণ আমরা জানি এটা রেগুলার গর্ভমেন্ট না, ইউনিফাইড গর্ভমেন্টও না। এর মধ্যে নানা পথের মানুষ রয়েছে।
“সুতরাং গুরুত্ব দেওয়া দরকার, ভালো নির্বাচনের জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, যা যা প্রয়োজন- সেটা করেই নির্বাচনি পথরেখাটা আগেই করা দরকার। ওই সময়ে আমরা যতকুটু পারি সংস্কারের কাজকে আমরা এগিয়ে নেব। আমি প্রত্যাশা করব, আপনাদের মাধ্যমে সরকার এ কাজটিকে (নির্বাচন) প্রধান কাজ হিসেবে নেবেন।”
গত ৫ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার সংলাপেও সিপিবি এ বক্তব্য তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছেন প্রিন্স।
মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “আমরা বরাবরই বলে এসেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু অন্তর্বর্তীকালীন কাজ আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রুটিন কাজের বাইরে- যদি অনেক বড় কাজে হাত দিয়ে দেয়, তাহলে তার জন্য এটা কঠিন হয়ে যাবে।
“এই কঠিন কাজ করতে যেয়ে অনেক সময় এমন কতগুলো বিতর্কের সম্মুখীন হতে পারে, তার যে অন্যতম কাজ- একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া, সেটাও কিন্তু সংকটে পরতে পারে। আপনাদের মাধ্যমেও এ কথা আমরা মনে করিয়ে দিচ্ছি।”
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি পথরেখা প্রকাশ করা উচিত বলেও মনে করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।
প্রিন্স বলেন, “ঐকমত্য আমরা করতে চাই, কিন্তু এবারের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এমন কতগুলো অনৈক্যের ধারা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে যদি আপনি পুরো ঐকমত্য তৈরি করতে চান- তাহলে হয়তো এটা কঠিন হয়ে যাবে৷ সুতরাং, যতটুকু ঐকমত্য করা সম্ভব, সেটার মধ্যে দিয়েই আগান।
“প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আমরা যদি নির্বাচনও করতে পারি, আমি প্রয়োজনীয় সংস্কার মানে বলছি- সুষ্ঠু নির্বাচনে যা যা সংস্কার সেটাকে; তাহলে একধাপ অগ্রগতি হবে।”
সরকারের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ করেন রুহিন হোসেন প্রিন্স।
তিনি বলেন, “আমরা দেখলাম, সরকারের শুরুতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কাউন্টার করে- এমন কতগুলো কথা তৈরি করা হলো, যেন তাকে রিপ্লেস করে সাতচল্লিশের ধারাবাহিকতায় চব্বিশ। এ ধরনের কতগুলো ঘটনা কিন্তু শুরুতে বিতর্ক তৈরি করেছে। আমরা আশা করব, এ বিতর্কগুলো বন্ধ হবে।”
এর আগে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ স্বাগত বক্তব্য দেন।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি কমিশন গঠন করে।
কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রথম বৈঠক হয়।
এরপর পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চায় ঐকমত্য কমিশন। ৩৪টি দল তাদের মতামত তুলে ধরে, যার মধ্যে সিপিবিসহ ৩২টি দল প্রথম পর্যায়ের সংলাপে অংশ নিয়েছে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, মিহির ঘোষ, এ এন রাশেদা, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কাজী রুহুল আমিন, রাগিব আহসান মুন্না, সাজেদুল হক রুবেল, আবিদ হোসেন ও ফজলুর রহমান ছিলেন প্রতিনিধি দলে।
ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।