Published : 13 Sep 2024, 12:36 AM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় উপদ্রব হয়ে দেখা দেওয়া ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
বাহিনীর অভিযানের সামর্থ্যের তুলনায় রিকশার সংখ্যা ‘অনেক বেশি’ বলে জানাচ্ছে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আবার গত এক মাসে নতুন নতুন রিকশা নামা, চালকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াও কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এজন্য ‘নমনীয়’ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার পর নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে বাধাহীনভাবে চলতে শুরু করে। এগুলোর এলোমেলো চলাচল জন বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অহরহই তাদের উল্টোপথে চলতে দেখা যাচ্ছে, ফ্লাইওভারেও উল্টোপথে উঠে পড়ছেন চালকরা। এগুলোর লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন কিছুই না থাকায় পুলিশের পক্ষেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত দুদিনে মূল সড়কে এই রিকশাগুলোর চাপায় ঢাকায় একটি শিশুসহ দুজনের মৃত্যুর পর মঙ্গলবার থেকে এই অভিযান শুরু নেমেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশায় পরপর দুটি মৃত্যুর পর অনেক সাংবাদিকরা ফোন করেছেন। নাগরিকদের মধ্যেও বিষয়টা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। আমরা সব মিলিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। অভিযান চলছে। আগামীকাল থেকে অভিযানের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে, মোট কথা আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।”
তবে পুলিশের অভিযানের সামর্থ্যের তুলনায় এসব রিকশার সংখ্যা অনেক বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সরকার পতনের দিন থেকেই থানার পুলিশের পাশাপাশি উধাও হয়ে পড়েন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও। বেশ কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকার পর বাহিনীর সদস্যরা কাজে ফিরলেও তাদের সংখ্যা বেশ কম। রাজধানীর মোগে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের যে স্বাভাবিক সংখ্যা দেখা গেছে এত বছর, এখন সংখ্যাটি অনেক কম।
রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্রাণ গেল নারীর
মূল সড়কে 'উড়ছে' ব্যাটারিচালিত রিকশা, দেখবে কে
থানা থেকেও পুলিশ সদস্যরা বাইরে যাচ্ছেন কম। থানায় হামলার পর অস্ত্র লুট ও গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে তাদের অভিযানের সক্ষমতাও কমেছে। থানাগুলোতে কার্যক্রম চলছে সীমিত পরিসরে।
অভিযানে কী হচ্ছে
এই প্রশ্নে নগর ট্রাফিক পুলিশের প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেটা এখন আর না বলি। আপনারা মাঠে গেলে দেখতে পাবেন।”
ঢাকার মিরপুর, মগবাজার, বাংলা মোটরসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ‘গাড়ি ধরছে’ বলে জানিয়েছেন কয়েকজন রিকশাচালক।
এদের একজন খোরশেদ আলম বলছেন, “সকালে মোহাম্মদপুর থিকা ভাড়া তুলছি ইনভার্সিটি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) যামু। ফিরার সময় ভাড়া পাইলাম আড়ংয়ের। পথে বাংলামোটরে পুলিশ আটকায় কয় আর যাইতারুম না। কিছুক্ষণ আটকাইয়া রাখল, পরে সাইড দিয়া ভূতের গলি দিয়া বাইরায়া আইলাম।”
খোরশেদ বলছেন, তিনি যে রিকশাটি চালান সেটি একটি ‘চায়না রিকশা’ অর্থার এর পুরোটাই চীন থেকে তৈরি হয়ে আসা। একেবারে নতুন রিকশাটি দৈনিক পাঁচশ টাকা জমায় তিনি সেটি চালাতে শুরু করেছেন ছয়দিন আগে।
দেশীয় বডি, চীনের মোটর-ব্যাটারি সংযুক্ত রিকশার দৈনিক জমা চার থেকে সাড়ে চারশ টাকার মধ্যে বলে জানান তিনি।
একেকদিন চালিয়ে হাজার-দেড় হাজার টাকা আয় হচ্ছে জানিয়ে খোরশেদ বলছেন, “আগের (প্যাডালচালিত) রিকশায় কষ্ট বেশি। এখানে কষ্ট কম, ডেইলি সব বাদ দিয়ে সাত-আষ্টশ টাকা থাকে।”
আরেক রিকশা চালক তৈয়ব আলী বলছেন, তাদের আদাবরের মনসুরাবাদ এলাকাতেই গত এক মাসে কম করে হলেও একশটি নতুন ব্যাটারি রিকশা নামানো হয়েছে। এখন হুট করে বন্ধ করে দিলে অনেকেই বিপদে পড়বে।
রিকশার চালক-মালিকদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ ‘সফট অ্যাপ্রোচে’ যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন উপকমিশনার রাকিব খান। তিনি বলছেন, “আমরা এখন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, সতর্ক করছি। মোড়ে মোড়ে মাইক বাজিয়ে কথা বলছি। মূল সড়কে আসা রিকশাগুলোকে বুঝিয়ে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।
ব্যাটারিচালিত রিকশার গন্তব্য কতদূর?
রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা, প্রাণ গেল নারীর
“অনেক ব্যাটারি রিকশাচালকদের বলছি আমাদের সাথে আধা ঘণ্টা ভলান্টিয়ার ডিউটি করেন। আমরা কমিউনিটি এনগেজমেন্টকে জোর দিচ্ছি। ছাত্র-জনতাকে অ্যাড করে ক্যাম্পেইন করছি যাতে তারা কেউ এদের বিশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার না করেন।”
‘সফট অ্যাপ্রোচ’ কেন
অভিযানে নেমেও নমনীয় কেন- এই প্রশ্নে মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার বলেন, “এদের অনেকে এই রিকশাগুলো এভাবে চালিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি কিছু করলে তা সমস্যা হতে পারে। সেজন্য কোনো ইস্যু তৈরি না করে সফট অ্যাপ্রোচে যাচ্ছি আমরা।
“আপাতত গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল এবং মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১৪ নম্বর সড়কটিতে তাদের চলাচলের বিষয়ে আমরা কঠোর হচ্ছি। এ রকম অ্যাপ্রোচ তাদের একটা অভ্যাস তৈরি করবে। পরে আমরা ধীরে ধীরে আরও কঠোর হব।”
এখনও কোনো রিকশার বিরুদ্ধে মামলা বা জরিমানা করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তাদের ডাম্পিংয়ের ভয় দেখাচ্ছি। কারও কারও কাছ থেকে কাগজে লিখিত রাখছি যেন তারা এর কাজ আর না করেন। কাউকে কিছু কিছু না করেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন পর আমরা হার্ড অ্যাপ্রোচে যাব।”