Published : 20 May 2025, 04:22 PM
হত্যাচেষ্টা মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা নুসরাত ফারিয়া।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩ টার সময় জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বের হন ফারিয়া।
কামিশপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কাওয়ালিন নাহার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এ দিন বেলা সোয়া ১২টার দিকে কারাগারে নুসরাত ফারিয়ার জামিনের কাগজপত্র এসে পৌঁছায়।
"পরে তা যাচাই বাছাই করে সাড়ে ৩টার দিকে তিনি তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দিলে তিনি তিনটা চল্লিশ মিনিটের দিকে তিনি কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান।"
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে কারাগারে পাঠানোর এক দিনের মাথায় নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার সকালে ফারিয়াকে জামিন দেওয়া দেয় আদালত।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান সকালে তার জামিনের আদেশ দেন।
ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, “আমরা নুসরাত ফারিয়ার জামিন চেয়ে স্পেশাল পুটআপ জমা দিয়েছিলাম। আদালত শুনানি শেষে তাকে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন।”
আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার তখনই জানিয়েছিলেন, তিনি ফারিয়ার জামিননামা দাখিল করবেন। তার প্রত্যাশা ছিল, এদিনই কারামুক্ত হতে পারবেন ফারিয়া।
ঘটনার সময় ‘দেশে ছিলেন না’ ফারিয়া
‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার এই অভিনেত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তারের পর গত দুদিন ধরেই নানা আলোচনা সমালোচনা চলছিল, যাতে যোগ দিতে দেখা যায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদেরও।
থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য রোববার সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে আটকে দেয়। পরে তাকে ভাটারা থানার এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি গত মার্চ মাসে নায়িকা নুসরাত ফারিয়া, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার, আশনা হাবিব ভাবনা, নায়ক জায়েদ খানসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীসহ ২৮৩ জনের নামে আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ভাটারা থানা গত ২৯ এপ্রিল তা এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এসময় গুলি চালানো হলে তা এনামুলের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই বিল্লাল ভূঁইয়া সোমবার সকালে ফারিয়াকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে ফারিয়ার পক্ষে তার আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
আইনজীবী ফারহান মোহাম্মদ আরাভ শুনানিতে বলেন, যে সময় মামলার বাদী গুলিতে আহত হয়েছেন, নুসরাত ফারিয়া তখন দেশেই ছিলেন না।
“তিনি (নুসরাত ফারিয়া) একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী। আন্দোলনের আগে ৯ জুলাই শুটিং করতে কানাডায় যান। সেখান থেকে তিনি ১৪ অগাস্ট দেশে ফিরে আসেন। সেই কাগজপত্র আমরা জমা দিয়েছি৷
“তিনি আন্দোলনের স্বপক্ষে ছিলেন, পোস্টও দিয়েছিলেন। এ ঘটনার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। তিনি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত নেই। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।“
ফারিয়ার আরেক আইজীবী মোর্শেদ আলম শাহিন বলেন, “ঘটনার সময় তিনি দেশে ছিলেন না, বিদেশে ছিলেন। তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো আইনের পরিপন্থি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাদের কাজ হল ভুল ত্রুটি তুলে ধরা। সেটায় তিনি করেছেন।
“তাকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে মামলায় জড়িত করা হয়েছে। আস্থার সর্বশেষ স্থল আদালত। যে কোনো শর্তে জামিনের প্রার্থনা করছি। তিনি শারীরিকভাবেও অসুস্থ।“
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, “নুসরাত ফারিয়া একজন মডেল, নায়িকা। তিনি এজাহারনামীয় আসামি। তদন্তেপ্রাপ্ত না। থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে আটকে দেয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তিনি জননন্দিত, স্বনামধন্য নায়িকা। আরেকজন স্বনামধন্য নায়ক আছেন ফেরদৌস। আমরা তাকেও খুঁজছি। তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন।“
ওমর ফারুক বলেন, “ফ্যাসিস্টরা কি করে। দেশের নায়ক, নায়িকা, ফুটবলারদের পিক আপ করে দলে নেয়। আর ফ্যাসিস্টদের লোভে পড়ে তারাও অনেকে চলে যায় আনুকূল্য পাওয়ার জন্য, উচ্চ পর্যায়ে যেতে। সেও পলককে অবলম্বন করেছে এবং সেখানে গিয়েছে।“
শুনানি শেষে আদালত ঘটনার সময় নুসরাত ফারিয়া দেশের বাইরে ছিলেন কিনা, আন্দোলনের পক্ষে ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন কিনা সেই মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে।
নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়ে বিচারক বলেন, ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ২২ মে জামিনের বিষয়ে শুনানি হবে।
তবে ফারিয়ার আইনজীবীরা জামিন চেয়ে বিশেষ আবেদন জমা দিলে মুখ্য মহানগর হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান মঙ্গলবারই শুনানি করেন এবং এই অভিনেত্রীর জামিন মঞ্জুর করেন।
আলোচনা-সমালোচনা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নির্ভর ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারিয়া।
প্রয়াত ভারতীয় নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় সিনেমাটি তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায়। ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমায় ফারিয়া ছাড়াও আরিফিন শুভ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, রিয়াজ আহমেদসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন।
নুসরাত ফারিয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয় রেডিও জকি ও উপস্থাপক হিসেবে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় ‘আশিকী’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।
এরপর ‘হিরো ৪২০’, ‘বাদশা-দ্য ডন’, ‘বস-টু’, ‘ধ্যাততেরিকি’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ফারিয়া।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি গানও করেন ফারিয়া। ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ শিরোনামে একটি গানের মধ্য দিয়ে গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল তার। এছাড়া ‘হাবিবি’, ‘আমি চাই থাকতে’সহ আরো কিছু গান ফারিয়া গেয়েছেন, যেগুলো প্রকাশ পেয়েছে ইউটিউবসহ সোশাল মিডিয়ার নানা মাধ্যমে।
তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকেই বলতে শুরু করেন, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমায় অভিনয় করার কারণেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই অভিনেত্রীকে।
হত্যাচেষ্টার মামলা দিয়ে তাকে ‘অন্যায়ভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে’ বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন
জামিন পেলেন নুসরাত ফারিয়া, মঙ্গলবারই মুক্তির আশা আইনজীবীর
যেতে দিলে তো বলতেন ছেড়ে দিলাম কেন: ফারিয়াকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার ‘বিব্রতকর’: ফারুকী
নায়িকা নুসরাত কারাগারে, জামিন শুনানি ২২ মে
আদালতে নুসরাত, কারাগারে আটক রাখার আবেদন
'হত্যাচেষ্টা' মামলায় গ্রেপ্তার নায়িকা নুসরাত ফারিয়া
এবার নুসরাত-অপু-ভাবনা-জায়েদ খানের নামে হত্যাচেষ্টার মামলা