Published : 30 Apr 2025, 12:17 AM
গ্যাসের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সংকটের কারণে ঢাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে বিঘ্নিত হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও চাহিদার অর্ধেক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ চালকদের।
রাজধানীর মগবাজার, মহাখালী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংকুচিত প্রকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) ফিলিং স্টেশনগুলোর বাইরে অপেক্ষমাণ যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে গত এক মাস ধরে।
ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, কমপ্রেসার চালু করেও চাহিদার অর্ধেক গ্যাসও দেওয়া যাচ্ছে না। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদেরকে।
গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হয়েছে সরকারকে, ফলে বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকের বরাদ্দ কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সিএনজিচালতি অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারগুলো।দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিলিন্ডার অর্ধেক খালি রেখেই ফিলিং স্টেশন ছাড়তে হচ্ছে তাদের।আবার দিনের মধ্যে একধিকবার একাধিকবার ফিলিং স্টেশনের লাইনে জ্বালানি গ্যাসের জন্য চালককে তার বাহন নিতে দাঁড়াতে হচ্ছে।
অটোরিকশা চালক রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে গ্যাসের চরম সংকট। ঘণ্টার পর ঘন্টা সিরিয়াল ধরে ফিলিং স্টেশনে আসতে হয়। আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। আমার গাড়িতে ৩০০ টাকার গ্যাস ঢুকানোর ক্যাপাসিটি আছে। সেখানে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকার গ্যাস নিয়ে ফিলিং স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। খুব সমস্যায় আছি।
“আধাবেলা (অর্ধদিবস) চুক্তিতে সিএনপি অটোরিকশা চালাই। সেখানে গ্যাস নিতেই দুই ঘন্টা আড়াই ঘণ্টা সময় চলে যায়। ১২০ টাকার গ্যাসে চার পাঁচ ঘণ্টা চালান যায়। অথচ একবার ফুল লোড করতে পারলে সারাদিন চালান যাইত।“
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ আব্দুর রব মিয়া বলেন, “আধাবেলা গাড়ি চালাই। দুইবার তিন করে যদি গ্যাসই নেওয়া লাগে তাহলে যাত্রী তুলি কখন। বর্তমানে কোনো পর্তাই (খরচবাদে লাভ) হইতেছে না। ঈদের পর থেকেই সংকটটা বেশি দেখা দিছে।”
রামপুরা হাজীপাড়া সিএনজি ফিলিং স্টেশনের শৃঙ্খলা কর্মী বলেন, “গাড়ির লাইন আধাকিলোমিটার লম্বা হয়ে যাচ্ছে। তারপরও অনেক গাড়ি ফেরত যাচ্ছে। এখন কিছু করার নাই। লাইনে গ্যাস কম। যতটুকু পারতেছে মেশিন দিয়ে টেনে দিতেছে।”
এই ফিলিং স্টেশনের প্রকৌশলী সজল মৃধা বলেন, গ্যাসের ইনলেট যেটা ৭০ থেকে ৮০ থাকার কথা। সেটা দিনের বেলায় থাকছে ২০ থেকে ২৫। রাতের বেলা অনেক সময় ৭০/৮০ থাকছে। শুক্রবারও দিনে রাতে ৭০/৮০ থাকছে। এই হল ভোগান্তির গাণিতিক হিসাব।
গ্যাস সংকটের কারণে ক্রেতা ও কোম্পানি দুই পক্ষেরই লোকসান হচ্ছে জানিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, “যার ৩০০ টাকার গ্যাস পাওয়ার কথা সে পাচ্ছে ৬০ টাকার ১০০ টাকার। আমাদের কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। গ্যাসের প্রেশার কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে যাচ্ছে। আগে যেখানে ৩০০ লাখ টাকা সেল হতো এখন সেখানে দেড় লাখ টাকা হচ্ছে।”
পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়েছে সরকার। ফলে শিল্প ও সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মতো বাণিজ্যিক সংযোগগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ কমছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গ্যাস সংকট নিয়ে বলেছিলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছে স্বল্প মেয়াদি সরকার। এই ধরনের সরকারের পক্ষে দীর্ঘদিনের এসব সংকটের সমাধান করা সম্ভব নয়।
“কারণ আজকেও যদি দুটি গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কার হয় তার থেকে গ্যাস পেতে অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে। এগুলো দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আমরা চেষ্টা করছি যখন যেই দিকে বেশি প্রয়োজন সেই দিকে রেশনিং করতে। “
পেট্রোবাংলার পেট্রোবাংলার ২৭ এপ্রিলের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। যেখানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।