Published : 13 Apr 2025, 04:44 PM
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে বাংলাদেশিরা সেখানে নানা ধরনের জটিলতায় পড়ছেন বলে জানিয়েছেন অভিবাসন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, আইন মেনে চলার বিকল্প নাই।
“আমি সকল বাংলাদেশি নাগরিককে উপদেশ দিচ্ছি- আপনার কাগজপত্র সবসময় আপডেট রাখুন, দীর্ঘকাল বিদেশে (অন্য দেশে) না থাকুন এবং পরিবর্তিত নিয়মাবলী বুঝতে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।”
রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ইমিগ্র্যান্টস ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মঈন।
অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোরতার কথা তুলে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছে, যার মাধ্যমে অননুমোদিত অভিবাসীদের প্রেরণ এবং সকল ভিসা ক্যাটাগরিতে কড়া তদন্ত কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
“এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো- সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা এবং বিদ্যমান অভিবাসন আইন কার্যকর করা।”
মঈন চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে আমেরিকায় অপরাধীদের অভয়ারণ্য আর নাই। একটা দেশে খুন করে, রাহাজানি করে, মারামারি করে, অর্থ আত্মসাৎ করে চলে গেলেন- এই রকম আর হবে না। বর্তমান সরকার এটাকে খুব কঠোর করে দিয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে গত ২৯ জানুয়ারি লেকেন রাইলি অ্যাক্ট পাস হওয়ার কথা তুলে ধরে অভিবাসন অ্যাটর্নি মঈন বলেন, কেবল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটটরা নয়, সবাই মিলে এই আইনটা করেছে।
“এই আইনের অধীনে বর্তমানে যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না, তারা যদি ছোটো অপরাধও করে, ছ্যাচড়া চুরির জন্য ভিসাও বাতিল হতে পারে। অনেক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হয়েছে। ছোট অপরাধ করে জরিমানাও গুনেছে।”
আগে এমন ছোট অপরাধের জন্য দোষ স্বীকার করে জরিমানা গুনে মাফ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও এখন তেমনটা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এখনও কোনো বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো না হলেও এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের যে তদারকি প্রক্রিয়া, তার মধ্যে বাংলাদেশিরা রয়েছে জানিয়ে মঈন বলেন, “ইউএস ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) বাংলাদেশি অননুমোদিত অভিবাসীদের শনাক্ত করে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নেবে।
“নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি এবং কানেকটিকাটে অননুমোদিত বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কূটনৈতিক পর্যায়ে মর্যাদাপূর্ণ ফেরত নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক কতজন বাংলাদেশি ফেরত পাঠানোর ঝুঁকির মধ্যে আছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তথ্য যেভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এটা থাকে না।
“যারা ইমিগ্রেশনের জন্য কেস ফাইল করেছে, কেবল তাদেরটা বোঝা যায়, সংখ্যাটা কত। আর অ্যাসাইলাম চেয়েছে, রেসিডেন্ট না- এই সংখ্যাটা কয়েক হাজারের মতো বলে পত্রিকায় আসছে।”
গ্রিন কার্ড ও অন্যান্য ভিসাধারীদের বিমানবন্দরে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে জানিয়ে মঈন বলেন, “বছরে ১০ মাসের বেশি সময় বিদেশে অবস্থান করলে স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা বাতিল হতে পারে।
“যদি আপনি বছরে ১০ মাসের বেশি সময় বিদেশে থাকেন, তাহলে আপনার গ্রিন কার্ড বাতিলের ঝুঁকি আছে।”
এ বিষয়ে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে দুই বছর পর যাওয়ার পরও সমস্যা হয় নাই। এখন দুই মাস পর গেলেও অনেক প্রশ্ন করা হয়।
“যথাযথ কারণ বা অনুমতি ছাড়া যদি এক বছরের বেশি আমেরিকার বাইরে থাকেন, তাহলে আপনাকে কিন্তু ঢুকতে দিতে বাধ্য না।”
শিক্ষার্থী ভিসা প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার কথা তুলে ধরে মঈন চৌধুরী বলেন, “ঢাকাতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে এফ-১ ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ওয়ার্ক লোড বৃদ্ধির কারণে অপেক্ষার সময় দিন দিন বাড়ছে।
“অতিরিক্ত প্রশাসনিক যাচাই প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় ভবিষ্যতে আরও দীর্ঘ বিলম্বের সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সময় মতো আবেদন ও আইনগত সহায়তা নেওয়া জরুরি।”
কঠোর তদন্ত আর সীমিত আকারে সাক্ষাৎকার চালু থাকায় পারিবারিক পুনর্মিলন, এইচ-১বি, এইচ-২বি কাজের ভিসারও জট তৈরি হয়েছে বলে জানান অভিবাসন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আবেদনকারীদের দীর্ঘ সময় ধরে প্রতীক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে এবং সম্পূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার সীমিত করার বিষয়ে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতের আদেশের কারণে এটি আপাতত স্থগিত রয়েছে।
গর্ভবতী অবস্থায় পর্যটন ভিসায় গিয়ে সরকারি সুবিধা নিলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনি যখন ট্যুরিস্ট ভিসায় যান, তখন দেখান যে- অনেক বড় লোক, দেশে গাড়ি-বাড়ি আছে, চাকরি আছে, ঘুরে চলে আসবেন, যাওয়ার পরে সরকারি সুবিধা নেয়, চিকিৎসা সেবা নেয়। তবে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়াতে এই কাজটি করবেন না।”
প্রত্যাবাসন এড়ানোর জন্য সরকার কী করতে পারে, এমন প্রশ্নে মঈন বলেন, “যারা অ্যাসাইলাম চেয়ে আবেদন করেছে, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। এখন তো আওয়ামী লীগ নাই। তাদের আগের অবস্থা তো এখন না থাকার কথা।
“এ কারণে এই সরকার বলতে পারবে না, তাদেরকে আনব না। আগে যারা আবেদন করেছিল, এখন তো ড. ইউনূসের সময়ে তাদের জন্য শান্তির দেশ হওয়ার কথা।”
ভিসা ও নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ফেইসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তথ্য দেন মঈন চৌধুরী।