Published : 03 Jun 2024, 07:55 PM
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার ও পলাতক দশ সন্দেহভাজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য গোয়েন্দা পুলিশকে সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গোয়েন্দা পুলিশের এক আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন সোমবার এই আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান এদিন দশ সন্দেহভাজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহ করার আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে ওইসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহের আদেশ দেন।
ওই ১০ জন হলেন- শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া, সেলেস্টি রহমান, সিয়াম হোসেন, আক্তারুজ্জামান শাহীন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া ও জামাল হোসেন।
আবেদনে বলা হয়, “মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মামলার ভিকটিম ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে ও গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামিরা ভিকটিমকে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের মৃতদেহের হাড় ও মাংস আলাদা করে মাংসপিণ্ড টয়লেটের কমোডে ফেলে দেয় এবং হাড়গুলো গারবেজ-পলিতে ভরে ট্রলি ব্যাগে করে আশে পাশের বর্জ্যখালে ফেলে দেয়।
“আসামিরা দীর্ঘদিন যাবত ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। তারা পরিকল্পনা করে, মামলার ভিকটিমকে কীভাবে অপহরণ করবে ও টাকা পয়সা আদায় করবে এবং টাকা-পয়সা নেওয়ার পর কীভাবে হত্যা তথা লাশ গুম করবে তার লোমহর্ষক বর্ণনা গ্রেপ্তার করা আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে।”
আবেদনে বলা হয়, মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের নাম- ঠিকানা সংগ্রহ এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
“মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ আসামির এনআইডি ও পাসপোর্ট নম্বরের বিপরীতে কোন ব্যাংকে কয়টা অ্যাকাউন্ট আছে তার তথ্য সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বরাবর আদেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।”
কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনার গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস থানায় জিডি করলে দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২২ মে জানান, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। ভারতের পুলিশের দেওয়া তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় আমানুল্লা ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ গত ২৪ মে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন। ফলে লাশ উদ্ধার করা কঠিন।
পরে কলকাতার ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়।
সন্দেহভাজন ওই দশজনের মধ্যে সিয়ামের নেপালে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও দেওয়া হয়নি। পুলিশের আবেদনে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার একটি আদালত।