Published : 01 Sep 2024, 04:42 PM
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যাওয়ার অভিযোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. শাহ কামাল এবং তার স্ত্রী ফারজানা সিদ্দিকার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
এই সেই সাবেক সচিব শাহ কামাল, যার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা পাওয়ার ঘটনায় ১৭ অগাস্ট মহাখালী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিএমপি।
১৮ অগাস্ট দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক শাহ কামালের অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হওয়ার তথ্য দেয়। একই দিন তাকে আদালতে তোলা হয় এবং হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন পায় পুলিশ।
রোববার আদালতে শাহ কামাল ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন করেন দুদকের উপ-পরিচালক মাহবুবুল আলম। দুদকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম।
আবেদনে বলা হয়, মো. শাহ কামালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ত্রাণের অর্থ আত্মসাৎ, বদলি ও জনবল নিয়োগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদকের আবেদন অনুযায়ী, শাহ কামালের ১২টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭২১ টাকা এবং তার স্ত্রী ফারজানার সাতটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪ টাকা রয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন, যা বিচার কার্যক্রমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
দুদকের আবেদনে আরও বলা হয়, অবরুদ্ধ না করা হলে এসব অর্থ বিচার চলাকালে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না। তা না হলে রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
শাহ কামাল ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সচিব ও পরে জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ে কাজ করেন।
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ২০২০ সালে নভেম্বরে শাহ কামালের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তবে পরে তা আর এগোয়নি।
৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এরই মধ্যে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে অবৈধ বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের অনেকের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে।
শাহ কামালের বারর রোডের বাসায় বাসায় পাওয়া বিদেশি মুদ্রার মধ্যে ছিল ৩ হাজার ডলার, ১ হাজার ৩২০ মালেশিয়ান রিঙ্গিত, ২ হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪ হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরি ডলার, ১ হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার দক্ষিণ কোরিয়ান ইয়ান ও ১৯৯ চাইনিজ ইয়ান।
অর্থ উদ্ধারের দিন বাসায় ছিলেন না শাহ কামাল। এই অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় সেদিনই একটি মামলা হয়, সেই মামলাতেই ১৭ অগাস্ট শাহ কামালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।