Published : 11 Dec 2023, 09:04 AM
সড়কে ট্রাক রাখা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ঝঞ্জাটের মধ্যে থাকা তেজগাঁওয়ের চেহারা পাল্টাতে এবার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন; পুরনো এ সংকটের সমাধান হবে এবার বহুতল টার্মিনালে।
এজন্য একসঙ্গে দেড় হাজার ট্রাক-কভার্ডভ্যান রাখা যাবে এমন একটি টার্মিনাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে শুরু করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। ঢাকা নগরীর মাঝখানে গড়ে ওঠা এক সময়ের এ শিল্পাঞ্চলে ব্হুতল এ টার্মিনাল করতে সাড়ে পাঁচ একর জায়গা বরাদ্দও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এটির কাজ শুরুর লক্ষ্য ধরে পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, তেজগাঁওয়ে বিটিআরসির ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অব্যবহৃত জায়গা পেতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিল ডিএনসিসি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ওই জমি পাওয়া গেছে।
এ ট্রাক টার্মিনাল হলে নগরীতে সড়কেও আর ট্রাক রাখার প্রয়োজন পড়বে না বলে জানান বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ঢাকায় ট্রাক, কভার্ডভ্যানের সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজার। এর মধ্যে অনেক ট্রাক আবার ট্রিপ নিয়ে বাইরে থাকে। ফলে দেড় থেকে দুই হাজার গাড়ি নানা কারণে বসে থাকে যাদের পার্কিংয়ের জায়গা দরকার হয়।
“পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় এখন রাস্তায় রাখতে হচ্ছে। তেজগাঁওয়ে টার্মিনাল হলে বাইরে ট্রাক রাখতে হবে না।”
তেজগাঁওয়ে মেয়র আনিসুল হক সড়কের দক্ষিণ পাশে ও তেজগাঁও রেল ক্রসিংয়ের পূর্বদিকে এ জমির অবস্থান। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া মোট জমির পরিমাণ ৫ দশমিক ৫২৮ একর। এখানে কমপক্ষে পাঁচতলা ভবনের টার্মিনাল তৈরির প্রাথমিক পরিকল্পনা করছে ডিএনসিসি।
ঢাকার যানজটের অনেক কারণের একটি তেজগাঁওয়ের সড়কগুলোতে দিনে-রাতে দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাক। এ নিয়ে বছরের পর বছর আলোচনা-সমালোচনা ও চেষ্টার পর প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের জোরালো উদ্যোগে সড়ক থেকে ট্রাক সরানো সম্ভব হয়। তবে তার মৃত্যুর পর সড়কে আবার ফিরে আসে ট্রাক।
মাঝে সড়কের এক পাশে লোহার গ্রিল দিয়ে রিকশা চলাচলের পথ করা হলেও তা কাজে দেয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক পরে আর দখলমুক্ত রাখা যায়নি। আবারও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পার্কিংয়ের স্থানে পরিণত হয় এটিসহ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের অনেকগুলো রাস্তা।
মেয়র আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তেজগাঁওয়ের বহুতল টার্মিনালটি কীভাবে তৈরি করা হবে তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলছে সিটি করপোরেশন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশ বহুতল পার্কিং ব্যবস্থা চালু করেছে যেটি স্টিল স্ট্রাকচারের। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আগামী সপ্তাহে একটি প্রেজেন্টেশন দেবেন আমাদের। আমরা তাদের অভিজ্ঞতা নেব। সব প্রস্তুতি শেষ করে আগামী বছরের জুলাই মাস নাগাদ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু করতে পারব।”
বহুতল এ টার্মিনাল তৈরি করতে পারলে রাস্তায় আর কোনো ট্রাক থাকবে না বলে জোর দিয়ে বলেন আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর উত্তর সিটির মেয়ের দায়িত্বে আসা আতিকুল ইসলাম।
বৈধ ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য জমি পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরে মেয়র আতিক বলেন, “শহরের মধ্যে সাড়ে তিন একর জমি কে দেবে আপনাকে? আপনি কি আমাকে আপনার দেড় একর জমি দেবেন?
“এ কারণে বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলেছি যে, এ হলো পরিস্থিতি? টেকসই সমাধান চাইলে তাদেরকে একটা জায়গা দিতে হবে আমাদের। আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের সারাংশ অনুমোদন করেছেন। এটাই হচ্ছে সমাধান।”
বহুতল এ ট্রাক স্ট্যান্ডের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, ট্রাক কীভাবে উপরের দিকে যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যাতে প্রয়োজনের সময় নিচে নেমে আসতে পারে।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই দুটি জমি ডিএনসিসিকে দেওয়া হয়েছে। জমিটি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। কিছু দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডিএনসিসি জায়গা বুঝে নিবে। এরই মধ্যে ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারা জায়গাটি ঘুরে এসেছেন।
“আমাদের প্রাথমিক কাজকর্ম সব শেষ। এখানে বহুতল বিশিষ্ট ট্রাক টার্মিনাল তৈরি করা হবে। প্রকৌশল বিভাগ ট্রাক স্ট্যান্ডের ডিজাইন তৈরি করছে। ডিজাইন হলে পরে বোঝা যাবে এটি কীভাবে তৈরি হবে, কত টাকা খরচ হবে। কী হচ্ছে না হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যেই জানা যাবে।”
করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টার্মিনাল তৈরির প্রক্রিয়াটি এখনও পরিকল্পনার পর্যায়ে আছে। সেখানে কতগুলো ট্রাক-কভার্ডভ্যান আছে সে বিষয়ে একটা জরিপ করবেন তারা। সে অনুযায়ী কত তলা বিশিষ্ট ভবন হবে তা ঠিক করা হবে।
“সম্পত্তি বিভাগ জমির ডিমার্কেশন করছে। তারা জায়গাটি বুঝিয়ে দিলে আমরা পরামর্শক নিয়োগ দেব। তারা দেখবে সেখানে বর্তমানে কতগুলো গাড়ি আছে। কত তলা ভবন করতে হবে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিকল্পনা হল কমপক্ষে পাঁচতলা বিশিষ্ট একটা ভবন আমরা সেখানে করব। সেখানে অন্তত দেড় হাজার গাড়ি একসঙ্গে রাখা যাবে। এছাড়া চালকদের বিশ্রামাগারসহ নানা আধুনিক সুযোগ রাখা হবে এখানে।”
বর্তমানে তেজগাঁওয়ে রেলওয়ের জমিতে রাখা হচ্ছে ট্রাক-কভার্ডভ্যান। সেখানে জায়গা না হওয়ায় আশপাশের বিভিন্ন সড়কেও রাখা হচ্ছে এসব ট্রাক। ট্রার্মিনাল হলে সেসব ট্রাক চলে আসবে টার্মিনালে।
ফরিদ উদ্দিন নামে একজন ট্রাক মালিক বলেন, “ট্রাক বাইরে রাখতে হয়, এজন্য নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন মালিক-চালকরাও।
“রাস্তায় গাড়ি থাকলে পুলিশ মামলা দেয়, রেকারিং করে। বাইরে থাকলে গাড়ির ব্যাটারি, চাকা, তেল চুরি হয়ে যায়। জায়গা হলে বাইরে রাখার আর কোনো সুযোগ নাই।”
বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান তারাও তেজগাঁওয়ে এখানে বহুতল পার্কিংসহ একটি টার্মিনাল তৈরির প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশন যদি বহুতল টার্মিনাল বানায়, তাহলে ঢাকা শহরের রাস্তায় কোনো গাড়ি থাকবে না। মালিকরা কখনই রাস্তায় গাড়ি রাখতে চান না। জায়গা না থাকার কারণেই এখন রাখতে হচ্ছে বলে দাবি তার।