Published : 06 Apr 2024, 07:28 PM
রেলের আগাম টিকেটে ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে ভিড় বেড়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে; চাপ বাড়লেও সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা, মিলছে ‘স্বস্তির ঈদযাত্রা’।
রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় যাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। চাপ সামলাতে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মত চলছে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও।
শনিবার স্টেশনের প্রবেশ মুখে যাত্রীদের টিকেটের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রও মিলিয়ে দেখছিলেন ভ্রাম্যমাণ টিকেট পরীক্ষকরা (টিটিই)। যাদের টিকেট নেই, তারা কাউন্টারে গিয়ে সংগ্রহ করছিলেন দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকেট।
আগের চেয়ে এদিন ভিড় বাড়লেও শৃঙ্খলার কারণে সমস্যা হচ্ছে না জানিয়ে স্টেশনের সিনিয়র টিটিই মো. মনসুর হেল্লাস বলেন, “দিন যত গড়াচ্ছে, যাত্রীদের ভিড়ও তত বাড়ছে। তবে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
“যাত্রীদের মোবাইলে সফট টিকেট বা হার্ড পেপারের টিকেট ভেরিফাই করে আমরা প্রবেশ করতে দিচ্ছি। টিকেট ছাড়া কোনোভাবেই কাউকে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছি না।”
ভোর পৌনে ৬টায় জামালপুরগামী বলাকা এক্সপ্রেস দিয়ে শুরু করে রাত পৌনে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় কমলাপুর থেকে ছুটছে ট্রেন। যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্ল্যাটফর্মের প্রবেশ মুখে বসেছে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কন্ট্রোল রুম।
শনিবার স্টেশনের ভেতরে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন শত শত যাত্রী। ঈদযাত্রার বিড়ম্বনা আর শিডিউল বিপর্যয় না থাকায় স্বস্তির ছাপ তাদের চোখে-মুখে। স্বাভাবিক সময়ের মতই ১৫-২০ মিনিট পরই প্ল্যাটফর্ম ছাড়ছে ট্রেন।
দুপুর সোয়া ১টায় জামালপুরের তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন বিল্লাল হোসেন। রেলের টিকেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “টিকেট অনলাইন কাটা, আবার প্রিন্টও করা লাগে নাই। মোবাইলে দেখিয়েই আসতে পেরেছি। তা ছাড়া এবার স্টেশনে ঢুকতে লাইনেরও সমস্যা হয়নি।”
দাদা-দাদির সঙ্গে এবার ঈদ উদযাপনে মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহী যাচ্ছে পাঁচ বছরের শাফিউল ইসলাম খান শাফি। দুপুর দেড়টার বনলতা এক্সপ্রেসের জন্য তারা অপেক্ষায় ছিলেন।
চোখেমুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে শাফি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলে, “ঈদ আমার খুব প্রিয়। নতুন জামা কিনেছি। এবার যাচ্ছি বাড়িতে। দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদ করব।
পেশায় মিউজিশিয়ান শাফির বাবা মো. দেওয়ান হাসিবুর রহমান বলেন, “শুক্রবারে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে চাহিদা এত বেশি ছিল যে শুক্রবারের টিকেট পাইনি। পরে শনিবারের টিকেট অনলাইনে কেটেছি। সকাল ৮টায় টিকেট ওপেন করেছিল, ঠিক ৮টাতেই টিকেটটা কেটেছিলাম। তাই পেয়েছি।”
পেশায় রাজমিস্ত্রী মারুফ হোসাইন কাজ করেন নোয়াখালী। শনিবার উপকুল এক্সপ্রেসে আসেন কমলাপুরে। সেখান থেকে যাবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে এই পথ তাকে যেতে হবে দাঁড়িয়ে।
গ্রামের বাড়ি রাজশাহী যেতে কমলাপুর স্টেশনে আসেন দুর্ঘটনায় এক পা হারানো মমতাজ। স্বামী আর ছোট ছেলে তিন দিন আগে চলে গেলেও ক্যাডেট কলেজে ভর্তিচ্ছু ছেলে মুশফিকুর রহমানের জন্যই দেরি করে ফিরছেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই নারী বলেন, “ছেলেটাকে একটু ভালো অবস্থানে এনে দিতেই কষ্ট করছি। আমি রয়ে গেছি তার খাবার-দাবারের কথা চিন্তা করে। আর ভিড় এড়াতে ছোট ছেলেটাকে নিয়ে তার বাবা তিনদিন আগে চলে গেছে।”
ট্রেনে এবারে ঈদযাত্রায় অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে মুশফিকুর বলেন, “লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই ঈদে বাড়ি যাচ্ছি। সব মিলিয়ে ভালো লাগছে।”
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কর্মী পলাশ মিয়া যাচ্ছিলেন ভৈরব। তবে ঈদের ছুটিতে না, যাচ্ছেন কাজে।
বেলা পৌনে ২টায় চট্টলা এক্সপ্রেসে ওঠার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ঈদের ছুটি নাই ভাই। আমাদের ছুটি ঈদের পরে। মানুষের সঙ্গে আমিও যাচ্ছি। তবে বাড়িতে না, যাচ্ছি বিদ্যুতের কাজে।”
রেলের ঢাকা স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার জানান, প্রতিদিন ৬৭ জোড়া ট্রেন চলছে, যার মধ্যে ৪২ জোড়া আন্তঃনগর। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে শুক্রবার থেকে যুক্ত হয়েছে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শেষ মুহূর্তের সরকারি-বেসরকারি ছুটি ও গার্মেন্ট কারখানা ছুটি হলে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে স্টেশনের গেটে তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টিকেট ছাড়া কাউকে রেলস্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
“বিশেষ ট্রেন বা রেগুলার ট্রেনের শিডিউলের তেমন কোনো বিপর্যয় নেই এখনো। তবে স্বাভাবিকভাবেই যতটুকু দেরি, প্রায় ১০ মিনিটের মত কোনো কোনো ট্রেন ছাড়তে দেরি হয়েছে।”
যাত্রীদের ট্রেনের ছাদে যাওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে মাসুদ সারওয়ার বলেন, “কমলাপুরে যেমন এ বিষয়ে আমাদের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। তেমনি এয়ারপোর্ট ও জয়দেবপুরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। যাতে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে না যেতে পারে।
“আমরা ঈদ যাত্রায় ট্রেনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় যত মিটিং করেছি, এ বিষয়ে বারবার পুলিশকে অবগত করেছি।”
যাত্রী নিরাপত্তার এক প্রশ্নে ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবার তো দেখা যায় গার্মেন্টস ছুটি হলে মানুষের ভিড় লেগে যায়। আর এত পরিমাণ টিকেটও দেওয়া সম্ভব হয়না। তাই মানুষ জোর করে ছাদে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার আমরা কয়েক স্তরে পুলিশ, র্যাব ও আরএনবি শৃঙ্খলা বজায় রাখিতে কাজ করছি।
“আশা করি কোনো ধরনের অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা হবে না। আমাদের সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে।”
আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের সম্ভাব্য দিন হিসাব করে ঈদযাত্রার সূচি সাজিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শেষে ৩ এপ্রিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ফিরতি যাত্রার আগাম টিকেট। সূচি অনুযায়ী, ৬ এপ্রিল দেওয়া হচ্ছে ১৬ এপ্রিলের টিকেট। এরপর ১৭ এপ্রিলের টিকেট বিক্রি হবে ৭ এপ্রিল, ১৮ এপ্রিলের টিকেট ৮ এপ্রিল এবং ১৯ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে ৯ এপ্রিল।