Published : 30 Jul 2023, 03:35 PM
‘আগুন-সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ কোর্টের বাইরের বিষয় মন্তব্য করে তা টেনে এনে আদালতের পরিবেশ ‘নষ্ট না করার’ আহ্বান জানিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
রোববার একটি নাশকতার মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর জামিন শুনানির সময় বিচরপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এ কথা বলেন।
এই মামলায় শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর জামনি শুনানি আরও দুই মাস স্থগিত করে।
২০১৩ সালে তাণ্ডবের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা এ মামলায় এখনও প্রতিবেদন দাখিল না করার কারণ জানতে চান আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক। পরে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় দিয়ে শুনানি ওই সময় পর্যন্ত মুলতবি করে বেঞ্চ।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
শুনানির শুরুতে এস এম মুনীর বলেন, এ মামলায় অনেক আসামি আছেন এবং তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “এ মামলার আসামি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আছে।“
এ সময় জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “সে আমেরিকা গেছে নাকি ইসরাইল গেছে, সেটা আমরা দেখব না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বণিক হইয়া আইছিল; রাজদণ্ড হইয়া বাইর হইছে। এখনও অনেকে আসছে।”
এক পর্যায়ে আদালত শাহবাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদকে ডায়াসের সামনে ডেকে জানতে চান, “তদন্ত শেষ করতে এত সময় নিচ্ছেন কেন? এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবেন না?”
তখন তদন্ত কর্মকর্তা রশিদ বলেন, “দুই মাস সময় প্রয়োজন।”
এক পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, “এরা (বিএনপি) তো আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে।“
তখন জ্যেষ্ঠ বিচারক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, “আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না। এসব কোর্টের বাইরের বিষয়। এভাবে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। কোর্ট তো ১৮ কোটি মানুষের।”
এরপর আদালত এ মামলায় পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় দিয়ে সে পর্যন্ত জামিন শুনানি মুলতবি রাখে।
মামলায় কী ছিল?
মামলার নথি অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামসহ সমমনা ১২ ইসলামী দল হরতাল ডাকে। এর সমর্থনে ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে কোতয়ালি থানাধীন বাবুবাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের করেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় ‘দুর্বৃত্তরা’ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায় বলে মামলায় অভিযোগ আসে।
কোতয়ালি থানার এস আই এরশাদ হোসেন ওেই ঘটনায় ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা দয়ের করেন।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৪ সালে শাহবাগ থানায় মামলা হয় আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবকে ২০১৬ সালের ১৫ মে ঢাকার খিলখেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।তখন থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
পরে রাষ্ট্রদ্রোহের দুই মামলা এবং নাশকতা, চেক প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলায় আসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতার এক মামলায় ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
আসলাম চৌধুরীর জামিন স্থগিতই থাকছে