Published : 01 Nov 2022, 06:36 PM
প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী একযোগ কাজ করার পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন অধিকারকর্মী এডওয়ার্ড এম কেনেডি জুনিয়র।
বৈশ্বিক সম্মিলিত আন্দোলনের ভাবনা তুলে ধরে মঙ্গলবার ঢাকায় এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “প্রতিবন্ধীদের অন্যান্য নাগরিক আন্দোলনের মতো আন্দোলন সংঘটিত করতে হবে। এটা বলার জন্য যে, কোনো ব্যক্তির শারীরিক কিংবা মানসিক দশা প্রতিবন্ধিতা তৈরি করে না, প্রতিবন্ধিতা তৈরি করে এ সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।”
মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের বন্ধু এডওয়ার্ড এম কেনেডির নামে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ইএমকে সেন্টারে মঙ্গলবার ‘প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি: অধিকার, সুযোগ নয়’ শীর্ষক বক্তৃতায় এ কথা বলেন তার ছেলে কেনেডি জুনিয়র।
ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে এক পা হারানো কেনেডি জুনিয়র যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবন্ধী অধিকার রক্ষার আন্দোলনের অগ্রণী মুখ।
২০১৭ সাল থেকে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পিপল উইথ ডিজ্যাবিলিটিজের (এএপিডি) সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির এ ভাতিজা।
২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কানেটিকাটের স্টেট সেনেটর ছিলেন টেড কেনেডি জুনিয়র।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী অধিকার নিয়ে কাজ করা একদল সংগঠকের উদ্দেশে ধানমণ্ডির ইএমকে সেন্টারে তিনি বক্তৃতা করছিলেন।
কেনেডি জুনিয়রের কথায়, “আমরা যেটা করছি, বলছি যে, এটা আমার সমস্যা নয়। আমরা নিজেরাই নিজেদেরটা দেখতে পারি। আমাদের এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন, যাতে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশের সুযোগ থাকবে।”
বিশ্বে প্রায় সব পরিবারেই একজন করে শারীরিক কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০০ কোটি প্রতিবন্ধী মানুষের বাস সারা পৃথিবীতে। আমেরিকা কিংবা বাংলাদেশ, প্রত্যেক জায়গায় প্রায় প্রত্যেক পরিবারে একজন করে প্রতিবন্ধী মানুষ আছেন।
অন্য সব মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদেরও সব ধরনের অধিকার নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যখন আমরা প্রতিবন্ধী অধিকারের কথা বলি, তখন আমরা বলছি ‘প্রতিবন্ধী অধিকার বলতে আসলে কি বুঝায়’?
“সহজ কথায় এটা হচ্ছে, অন্য সবাই যেসব অধিকার ও সুযোগ পায়, সেগুলো প্রতিবন্ধীদের ব্যক্তিদেরও প্রাপ্য।”
এই ‘সহজ’ কাজটি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম চালানোর প্রসঙ্গ টেনে কেনেডি জুনিয়র বলেন, মাত্র ১০-২০ বছর ধরে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নাগরিক অধিকার হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
নিজের পা হারানোর সময়ের কথা তুলে ধরে কেনেডি জুনিয়র বলেন, “আমি যখন পা হারাই তখন আমার বয়স মাত্র ১২ বছর এবং এটা আমাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবন্ধীর কাতারে ফেলে দেয়। যখন ডাক্তার বললেন, আমার পা কেটে ফেলতে হবে, তখন আমি ভেবেছিলাম আমরা জীবন বুঝি শেষ!
“ভেবেছি, আমি এখন কী করব? কোন মেয়ে কি আমার সঙ্গে প্রেম করবে? এক ধরনের কুসংস্কার ও প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে নেতিবাচক মানসিকতা আমার মধ্যে ছিল, যেগুলো দূর করার জন্য এখন আমি কাজ করছি। ওটা ছিল আমাদের আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। সেই সময়ের সিদ্ধান্ত থেকে আমি আইনজীবী হয়েছে এবং নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি।”
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য কেনেডির পরিবারের অগ্রণী ভূমিকার পেছনে পরিবারের একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী থাকাও অন্যতম কারণ ছিল উল্লেখ করে কেনেডি জুনিয়র জানান, তার ফুপু রোজমেরি ছিলেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। বোনের কষ্ট দেখে কেনেডি পরিবারের সদস্যরা ‘অনুপ্রেরণা’ নিয়েছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে যে আর্থিক সহায়তা দেয়, সেখানে ‘প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি’র বিষয় যুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান কেনেডি জুনিয়র।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিষয়ক কর্মকর্তা শারলিনা হুসেইন মর্গ্যানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডব্লিউডিডিএফ) নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি ও জাগো ফাউন্ডেশনের প্রধান করভী রাখসান্দ।
ইএমকে সেন্টারে কেনেডি পরিবার
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হিসাবে এক সপ্তাহের সফরে শনিবার সপরিবারে ঢাকায় এসেছেন টেড কেনেডি জুনিয়র।
সফরের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার সকালে ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ‘এডওয়ার্ড এম কেনেডি (ইএমকে) সেন্টার ফর পাবলিক সার্ভিস অ্যান্ড দি আর্টস’র দুই আয়োজনে যোগ দিতে যান তিনি।
এ সফরে তার সঙ্গী হয়েছেন স্ত্রী ক্যাথরিন ‘কিকি’ কেনেডি, মেয়ে কিলি কেনেডি, ছেলে টেডি কেনেডি, ভাতিজি গ্রেস কেনেডি অ্যালেন ও ভাতিজা ম্যাক্স অ্যালেন।
শুরুতে ইএমকে সেন্টারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্মের প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন টেড কেনেডি জুনিয়র। এরপর তাদেরকে ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ চিত্র প্রদর্শনী’ ঘুরে দেখান কিউরেটর শিল্পী অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা।
২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে যৌথ উদ্যোগে ইএমকে সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাবার নামে সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কেনেডি জুনিয়র বলেন, “ইএমকে সেন্টার নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখছে জেনে আমি আনন্দিত এবং ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব যুব সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ তারা নিচ্ছে।”
কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম দেখতে পেলে তার বাবা টেড কেনেডিও খুবই খুশি হতেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বক্তৃতায় শেষে ইএমকে সেন্টারকে ‘ক্রিস্টাল মার্বেল’ উপহার দেন কেনেডি জুনিয়র।