Published : 26 Dec 2023, 06:26 PM
নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের চূড়ান্ত ব্যবস্থা হিসেবে প্রার্থিতা বাতিল করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বলেছেন, “বিধি লঙ্ঘনের জন্য প্রথমে শোকজ, মামলা হচ্ছে, ডাকা হচ্ছে। এরপর নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে চরম ব্যবস্থা হিসেবে ইসি প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে। এছাড়া নির্বাচনি মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স নেমে গেলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।”
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন বিধি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের মত কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে- ইসির এমন হুঁশিয়ারি আসে গেল শনিবার।
সেদিন বৈঠক শেষে ইসি আনিছুর রহমান বলেছিলেন, “প্রার্থিতা বাতিল হবে, কোনো না কোনো জায়গায় কারো না কারো, এইটুকু আভাস আমি দিয়ে রাখলাম।"
এরইমধ্যে প্রার্থিতা বাতিল প্রশ্নে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। দুজনের মধ্যে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার লড়ছেন কুমিল্লা-৬ আসনে; আরেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ভোট করছেন বরগুনা-১ আসনে।
বুধবার বিকাল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে প্রার্থিতা কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে।
অশোক কুমার দেবনাথ জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২৫০ প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ১৫৯ জন শোকজের জবাব প্রতিবেদন আকারে পাঠিয়েছেন। তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন।
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল হাইসহ সেখানকার তিনজনের বিরুদ্ধে রোববার আদালতে মামলা করার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। আর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে ইসি।
১০ হাজারের বেশি কেন্দ্র ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ৪২ হাজারের ১৪৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার ৩০০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তবে ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে কিছু নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক।
“আমাদের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে কিছু নাই। আমাদের কাছে আছে গুরুত্বপূর্ণ বা অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আনসার সদস্যের পাশাপাশি পুলিশের সংখ্যা বেশি থাকে; আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে কিছু সংখ্যক কম থাকে। চরাঞ্চল, দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্বে সমস্যা হলে সেগুলোকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এই তালিকা করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আমাদের কাছে তথ্য আসেনি।”
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ (ইসির ভাষায় গুরুত্বপূর্ণ) ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২ লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। আর সাধারণ ভোট কেন্দ্রে থাকবে ৪ লাখ ৭২ হাজার সদস্য।
৩০০টি নির্বাচনি এলাকার প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫-১৬ নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন করা হবে।
মহানগর এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দুইজন পুলিশ, অস্ত্রসহ একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, শুধু লাঠিধারী ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দুইজন গ্রামপুলিশ সদস্য থাকবে সেই দলে।
তবে প্রতি গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ তিন পুলিশসহ ১৬-১৭ জনের একটি দল থাকবে।
যার মধ্যে অস্ত্রধারী তিনজন পুলিশ সদস্য, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী আরেকজন আনসার এবং ১০ জন লাঠিধারী আনসার সদস্য থাকবে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র হলে ১৬ সদস্যের একটি নিরাপত্তা দল পাহারা দেবে এবং অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা তিনজনের পরিবর্তে চারজন হবে।
নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবেচনায় এবারের ভোটে ২৫টি জেলার ৭২টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা বা পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রার্থিতা বাতিল কেন নয়, বাহার-শম্ভুর ব্যাখ্যা তলব
ভোটে নিরাপত্তা: ৭২ ‘দুর্গম’ উপজেলা চিহ্নিত
এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, এসব উপজেলার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৬-১৭ জন নিরাপত্তা সদস্য থাকবে। আর উপকূলীয় ৭ জেলার ১২টি আসনের ১৩ উপজেলায় কোস্ট গার্ড মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যোগাযোগে অসুবিধা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় নির্বাচনি সামগ্রী পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও এসব এলাকাকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখের বেশি।