Published : 02 Jun 2025, 06:18 PM
রিজার্ভের টানাপড়েন আর আইএমএফ এর ঋণের শর্ত যখন চাপ হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মাথার ওপর ঝুলছে, সেই সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।
সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ মূল্যস্ফীতির এই লক্ষ্যমাত্রা প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০.৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
“আশার কথা হল, এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে।“
আর বাজেটের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৯.০ শতাংশ প্রাক্কলন (সংশোধিত) করা হলেও আশা করা হচ্ছে এটি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৬ শতাংশে এবং ২০২৭-২৮ মেয়াদে কমে ৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচককে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেই লক্ষ্য পূরণ করা যায়নি। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১২ মাসে মূল্যস্ফীতির চলন্ত গড় দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২১ শতাংশে, যা বহু দশকের মধ্যে বেশি। তাতে নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্তের সংসারে তেল-নুনের হিসাব মেলাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড চাপ পড়ছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। পরের পাঁচ মাস অর্থাৎ মে পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ঘরে ছিল। মে মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ।
তবে সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের উপরে ছিল। এর মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠে যায়, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সবশেষ এ বছর মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
“মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে।”
আর বাজেটের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আর এটি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি অব্যাহত থাকবে।”